শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু শিশু পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান পাচ্ছে কিনা, শিশুর শরীরে কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রয়েছে কিনা, তা বুঝবেন কীভাবে? আসুন জেনে নিই:
আয়রন এর অভাব:
রক্তশূন্যতা, শিশুর অতিরিক্ত চুল পড়া, সহজেই নখ ভেঙে যাওয়া, সবসময় ক্লান্ত থাকা আয়রনের অভাবকে নির্দেশ করে। আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিন শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবারহ করতে পারে না, ফলে শিশুর শ্বাসকষ্ট এবং অতিরিক্ত ঘাম হয়। এছাড়াও আয়রনের অভাবে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
শিশুকে এধরণের সমস্যা থেকে দূরে রাখতে তার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলিজা, লালশাক, কাঁচা কলা, পাকা কলা, সফেদা, সামুদ্রিক মাছ, লাল মাংস, মিষ্টিআলু, পালংশাক ইত্যাদি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
ভিটামিন এ এর অভাব:
শিশুর যদি অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধা হয়, কিছুক্ষণ পরপর চোখ শুষ্ক হয়ে যায় এবং ঘন ঘন রোগে আক্রান্ত হয়, তবে তার শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি রয়েছে। শিশুর স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরিয়ে এনে সুস্থ জীবন নিশ্চিত করার জন্য তার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় গাজর, মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টিআলু, ডিম, দুধ জাতীয় খাবার, মাখন, পনির, সবুজ শাক ইত্যাদি ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিত করতে হবে।
ভিটামিন বি এর অভাব:
ভিটামিন বি এর অভাবে রক্তশূন্যতা, মুখ ও জিহ্বায় ঘা এবং পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। হজমের সমস্যা হওয়া এই ভিটামিনের অভাবের অন্যতম লক্ষণ। অঙ্কুরিত ছোলা, আটা, লাল চাল, টমেটো, মটরশুঁটি, পেঁয়াজ, লিভার, মাংস, ডিম, দুধ ভিটামিন বি এর উৎকৃষ্ট উৎস।
ভিটামিন ডি এর অভাব:
ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড় ক্ষয় হওয়া, হাড় ও পেশিতে ব্যথা, শরীরের বিকৃতি, সারাদিন ঝিমঝিম লাগা ইত্যাদি হয়ে থাকে। শিশুর হাড় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ক্যালসিয়াম। আর শরীরের এই ক্যালসিয়াম গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে দরকার ভিটামিন ডি। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন ডি না থাকলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ কখনোই নিশ্চিত হয় না। তাই শিশুর শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দূর করতে তাকে প্রতিদিন সূর্যালোকের সংস্পর্শে আনার পাশাপাশি দুধ, মাখন, ডিম, ইলিশ মাছের তেল, কড লিভার অয়েল, অস্থিমজ্জা, সবুজ তরকারি, স্যামন ফিস, চিজ ইত্যাদি ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।
জিংক এর অভাব:
শিশুর যদি সবসময় খাবারে অনীহা থাকে, যদি সে প্রায়ই সর্দি, ফ্লু তে আক্রান্ত হয় তবে তার শরীরে জিংক এর অভাব রয়েছে। জিংক এর অভাবে খাবারে অরুচি হয়, শিশুর বিকাশ স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়, চুল পড়ে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, কোথাও কেটে গেলে তা ঠিক হতে সময় বেশি নেয়। শিশুকে এসব সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করতে তার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমিত পরিমাণে লাল মাংস, মুরগীর মাংস, হোল গ্রেইন সিরিয়াল, বিভিন্ন রকমের ডাল ও বীজ, দুধ, ওটস ইত্যাদি জিংক সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।