শিশুর বিকাশের লক্ষ্যমাত্রাগুলো কি কি?

আপনার সন্তানের তিন বছরে পদার্পনের দিনটি বিশেষ আকর্ষণীয়, কেননা এর মধ্য দিয়ে সে স্পর্শকাতর দুই বছর অতিক্রম করলো এবং তার বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ বয়স ‘তিন এবং চার’- এ পদার্পণ করলো। এ সময়টাতে সাধারণত শিশুরা তাদের ইচ্ছেগুলোকে প্রাধান্য দেয়, কোন চাওয়া থাকলে সেটা পাওয়ার জন্য জোরালো দাবি জানায়। তার জীবনের এই পরবর্তী দুই বছর সে চিন্তা ও শারীরিকভাবে আরো পরিপক্ব হয় এবং তার কল্পনার জগত ও বাস্তবতার সাথে নতুন করে বোঝাপড়া তৈরি করে।
আপনার সন্তানের এ বয়সটিতে তার যথাযথ বিকাশে কিছু লক্ষ্যমাত্রা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যার সঠিক পরিচর্যার ফলে সন্তানের সুন্দর ও নিরাপদ বেড়ে ওঠা নির্ভর করে। এমন কিছু লক্ষ্যমাত্রা নিচে উপস্থাপন করা হলঃ




চলাফেরার লক্ষ্যমাত্রাঃ
⦁ পাঁচ সেকেন্ড পর্যন্ত কোন সাহায্য ছাড়াই সে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে।
⦁ কারো সাহায্য ছাড়াই সিঁড়ি দিয়ে উপরে এবং নিচে উঠা-নামা করতে পারবে।
⦁ পা দিয়ে বলকে সামনের দিকে ছুঁড়ে মারতে পারবে।
⦁ পা দিয়ে বলকে পেছনের দিকে ছুঁড়ে মারতে পারবে।
⦁ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছুঁড়ে আসা লাফানো বল ধরে ফেলতে সক্ষম হবে।
⦁ তার চলাফেরার তৎপরতায় স্বতস্ফুর্ততা স্পষ্ট প্রকাশ পাবে।

আঙ্গুল ও হাতের দক্ষতায় লক্ষ্যমাত্রাঃ
⦁ কোন চতুষ্কোন দেখে তা আঁকতে পারবে।
⦁ দুই বা তিনটি কাঠামো এঁকে দিয়ে কোন মানুষের শরীর বোঝাতে পারবে।
⦁ কেঁচির ব্যবহার স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারবে।
⦁ কিছু বর্ণমালা দেখে দেখে লিখে ফেলতে পারবে।

ভাষাগত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনঃ
⦁ সমজাতীয় বা বিপরীত এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে পারবে।
⦁ ব্যাকরণের কিছু মৌলিক বিষয় সম্পর্কে বুঝতে পারবে।
⦁ পাঁচ থেকে ছয় শব্দ দিয়ে নিজের মত করে বাক্য তৈরি করে কথা বলতে পারবে।
⦁ নতুন কোন আগন্তুকের সাথে স্পষ্টভাবে নিজের মনোভাব ব্যক্ত করতে পারবে।
⦁ নিজের মত করে গল্প বলতে শুরু করবে।

জ্ঞানভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনঃ
⦁ যে কোন রঙ চিনতে এবং তার নাম সঠিকভাবে বলতে পারবে।
⦁ গণনা সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে এবং কিছু সংখ্যাবাচক শব্দ (১,২,৩…) বলতেও পারবে।
⦁ কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোন বিষয় সম্পর্কে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখার ক্ষমতা অর্জন করবে।
⦁ সময় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে।
⦁ পূর্বে শোনা কোন গল্প বা গল্পের অংশ নতুন করে শুনলে তা পূনরায় বলতে পারবে।
⦁ কল্পনাত্মক খেলায় (পুতুলের বিয়ে, ঘোড়ার পিঠে চড়া ইত্যাদি) নিজেকে সম্পৃক্ত করে আনন্দ লাভ করবে।

সামাজিক জ্ঞান ও অনুভূতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনঃ
⦁ নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে আগ্রহী হবে।
⦁ অন্য শিশুদের সাথে যোগাযোগ ও খেলাধূলায় আন্তরিক হবে।
⦁ বাবা ও মায়ের সাথে খেলতে পছন্দ করবে।
⦁ যে কোন তর্ক বা মতামতের ক্ষেত্রে বড়দের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেবে।
⦁ ধীরে ধীরে নিজের স্বাধীনতার প্রতি আগ্রহী হবে।
⦁ মনস্তাত্ত্বিক, শারীরিক ও অনুভূতির ক্ষেত্রে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে ভাবতে শুরু করবে।
⦁ কল্পনা ও বাস্তবতার মাঝে পার্থক্যটা মাঝে মাঝে উপলব্ধি করতে পারবে।


মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পরিবর্তনঃ
প্রতিটি শিশুই তার নিজের পারিপার্শ্বিকতার অনুকূলে বেড়ে ওঠে। কাজেই, এটা বলাটা কঠিন যে, একজন শিশু ঠিক কিভাবে বা কখন যথাযথভাবে তার দক্ষতাগুলো অর্জন করবে। এখানে এমন কিছু সাধারণ পরিবর্তন সম্পর্কে বলা হল, আপনার সন্তানের যে পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে আপনার সচেতন থাকা প্রয়োজন। যদি নিচের এই বিষয়গুলো দেখতে পান, তাহলে বুঝবেন যে আপনার সন্তান তার স্বাভাবিক বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে কিছুটা দেরি করছে কিংবা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে না।
⦁ বুল ছুঁড়ে মারতে পারছে না।
⦁ কারো সহযোগিতা ছাড়া লাফ দিতে পারছে না।
⦁ কিছু লেখা বা আঁকার ক্ষেত্রে অধিক মাত্রায় হিজিবিজি হচ্ছে বা কোন সু’স্পষ্ট কাঠামো দাঁড়াচ্ছে না।
⦁ বাবা-মা বাসা থেকে বের হলে কাঁদতে থাকে।
⦁ কোন গেইমের প্রতি আগ্রহ দেখায় না।
⦁ অন্যান্য শিশুদের দেখলে উপেক্ষা করে।
⦁ পরিবারের বাইরের কারো ডাকে বা কথায় আগ্রহ দেখায় না।
⦁ কোন ধরনের কল্পনাত্মক খেলায় আগ্রহ দেখায় না।
⦁ ঘুমানো, পোশাক পরিবর্তন বা বাথরুমের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক আচরণ করে।
⦁ রেগে গেলে বা ভয় পেলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না।
⦁ কোন বৃত্ত বা যে কোন ধরনের কোণ দেখে আঁকতে পারে না।
⦁ তিন শব্দের বেশি শব্দ দিয়ে বাক্য সাজানো বা কথা বলতে পারে না।
⦁ ‘আমি’ বা ‘তুমি’ সঠিক ভাবে সম্বোধন করতে পারে না।

facebook.com linkedin.com twitter.com
Categories:

Leave a Reply

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে প্রয়োজন যে ৮টি খাবার
প্রতিটি পরিবারে বাচ্চাদের খাবার নিয়ে থাকে বাড়তি সচেতনতা। বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে, বাচ্চার বয়স
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে কোন ৫টি সমস্যা দেখা দেয়?
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে যে ৫টি সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আয়োডিনের ঘাটতির
পরীক্ষার সময় মনোযোগ ধরে রাখতে ও সুস্থ থাকতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার
স্টুডেন্ট লাইফ মানেই প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা। শিক্ষা জীবনে স্টুডেন্টদের পরীক্ষার মাধ্যমেই ধাপে ধাপে এগিয়ে
দৈহিক সুস্থতায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জিংক কেন প্রয়োজন?
সুস্থ থাকতে হলে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ থাকা চাই। সহজভাবে বলতে চাইলে,
don't worry about summer
প্রচন্ড গরমে নিমিষেই দূর হবে সারাদিনের ক্লান্তি
রোদের তাপ ক্রমশ বাড়ছে তাই না? এদিকে এই গরমের দিনে মিসেস শারমিনকে থাকতে হয় সারাদিন
গরমে সুস্থ থাকতে কেমন খাবার খাওয়া চাই?
ইদানীং অনেক গরম পড়েছে তাই না? চারিদিকে গরমের দাবদাহে জীবন প্রায় অতিষ্ঠ। কিন্তু জীবন-জীবীকার খোঁজে আমাদের
কম খরচে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে খাদ্যতালিকা যেমন হওয়া উচিত
বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন? মাছ-মাংসের দাম শুনলেই মনে হয় বাজারে আগুন লেগে আছে। কিন্তু
DHA এবং ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট
ডোকোসাহেক্সনিক এসিড বা সংক্ষেপে DHA হলো মস্তিষ্ক গঠনের একদম প্রাথমিক উপাদান। সহজ করে বললে DHA
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন কেন জরুরি ?
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভস্থ সন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিতে মায়ের চাই বাড়তি যত্ন ও সব রকমের পুষ্টি
বুদ্ধিতে বৃদ্ধিতে সন্তানের চাই সঠিক পুষ্টি
পুষ্টি ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বাড়ন্ত শিশুর জন্য খুব জরুরি। কেননা জন্মের পর প্রথ এই কয়েক