বাড়ন্ত বয়সী শিশুদের মাঝে ‘দুই থেকে পাঁচ বছর’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারন, এ সময়ের বিকাশ সারা জীবন স্থায়ী হয়। প্রি-স্কুলের এ সময়টাতে শিশুরা নিজেদের মত করে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে। শারীরিক এবং মানসিকভাবেও তারা এ সময় বেশ সক্রিয় থাকে। ফলে, প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত ক্যালরি এবং নানা রকম পুষ্টিকর খাবারের।
আপনার সন্তানের সুরক্ষা এবং সঠিকভাবে বেড়ে ওঠায় তার সুষম খাবার সম্পর্কে জানাতে প্রয়োজনীয় কিছু খাবারের বৈশিষ্ট্য এবং গুনাগুণ নিয়ে আমাদের এ পর্বের আয়োজন।
১। ক্যালসিয়ামঃ
ক্যালসিয়াম শিশুর স্নায়ুর কার্যক্রম, হাড়, পেশি এবং দাঁতের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর জন্য গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয়।সম্প্রতি দেখা গেছে , বেশিরভাগ বাচ্চাদের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন- ডি এর অভাবে হাড় নরম করে গঠন হচ্ছে।ফলে অল্পতেই হাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। দুধ, বাদাম, কাঁটাসহ ছোট মাছ, ডিমের কুসুম, শিমের বিচি, সবুজ শাক-সবজি, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, কচুশাক, ঢেঁড়স ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
২। পর্যাপ্ত ফ্যাটি এসিড (ইএফএএস)
স্নেহ জাতীয় পদার্থের মধ্যে ফ্যাটি এসিড শরীরের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো এবং বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ফ্যাটি এসিড কার্যকরী। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন এবং উর্বরতা বৃদ্ধিতেও ফ্যাটি এসিড বিশেষ করে এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিড অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্যামন মাছ, টুনা মাছ সহ সামুদ্রিক মাছে ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। এছাড়াও ভেজিটেবল তেল, মাছের তেল , বাদাম , ওয়ালনাট , কডলিভার তেল ইত্যাদি খাবারে ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়।
৩। আয়রন
শরীরে রক্ত ও হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে আয়রন ভূমিকা রাখে। সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার জন্য দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ১০ মিলিগ্রাম আয়রনের প্রয়োজন হয়। আয়রনের অভাবে এনিমিয়া হতে পারে। ফলে শিশুদের দূর্বলতা ও অবসাদ তৈরি হয় এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। পর্যাপ্ত আয়রনের জন্য ডিমের কুসুম, মাংস,কলিজা, কুমড়ার বীজ, পালংশাক, লালশাক , বীট , ছোলার ডাল ,আলু, কিসমিস, সামুদ্রিক মাছ , কলা খাওয়াতে পারেন। আয়রন শোষণের জন্য ভিটামিন সি এর প্রয়োজন হয়।এজন্য দুপুরে শাক এর সাথে এক টুকরো লেবু খাওয়া দরকার।
৪। ম্যাগনেসিয়াম
শিশুর নার্ভ, পেশী ও হাড়ের জন্য ম্যাগনেসিয়াম জরুরি। ম্যাগনেসিয়াম হাড়কে শক্তিশালী করে এবং হার্টের ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে। এছাড়াও ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে/ ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি করে পেশি ও নার্ভকে সচল রাখে। আমাদের প্রতিদিন ৩৫০ মিঃগ্রা ম্যাগনেসিয়াম দরকার। কালো বিন, পালংশাক ও কুমড়ার বীজ,আমনড বাদাম, খেজুর ডার্ক চকলেট , টফু, কলা ইত্যাতি খাবারে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
৫। পটাশিয়াম
বাড়ন্ত শিশুদের সুস্থ্য হাড় ও পেশীর জন্য পটাশিয়াম বিশেষ কার্যকরী। পটাশিয়াম শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং শিশুর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। অনেক খাবারেই পটাসিয়াম থাকে। এরমধ্যে কলা, মাংস, স্যামন মাছ, মিষ্টি আলু, ব্রোকলি,টমেটো , শাক, মটরশুঁটি, শশা খেজুর ,ডাবের পানি অন্যতম।
৬। ভিটামিন-এ
দৃষ্টি শক্তির বিকাশ ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং ত্বকের পরিচ্ছন্নতায়, দেহের সার্বিক বৃদ্ধিতে ভিটামিন-এ কার্যকরী। বিভিন্ন ফল ও গাড় শাঁক সবজির পাশাপাশি দুগ্ধজাত খাবারে ভিটামিন-এ পাওয়া যায়। এছাড়াও ডিমের কুসুম, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, আম, মিষ্টি আলু, পালং শাক, লাল শাক্ , মটরশুঁটি, বাঁধাকপি ভিটামিন-এ এর অন্যতম উৎস।
৭। ভিটামিন-সি
শিশুর শরীরে রক্ত কণিকা তৈরি, শরীরের বিভিন্ন পেশী, ত্বক ও টিস্যু সুস্থ্য রাখতে ভিটামিন-সি বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রাখে। দেহে আয়রন , ক্যালসিয়াম সহ অনেক ভিটামিন শোষণে ভিটামিন সি দরকার হয়। লেবু, আমলকী , লাল মরিচ, কমলা , পেঁপে, ক্যাপ্সিকাম, পেয়ারা, টমেটো, জাম, কাচা তেতুল, টাটকা শাঁক সবজীতে ভিটামিন-সি থাকে।
৮। ভিটামিন-ডি
বাচ্চাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম শোষণ এবং হাড় তৈরি ও মজবুত করতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য কার্যকরী রাখতে ভিটামিন-ডি কাজ করে। ভিটামিন-ডি এর অভাবে বাচ্চাদের খিঁচুনি, হাঁটু আটকে যাওয়া, পা বেঁকে যাওয়া এবং রিকেট হতে পারে। সূর্যের আলো ভিটামিন-ডি এর প্রধান উৎস। এছাড়াও দুধ , মাখন , মাছের তেল, অস্থি মজ্জা , সামুদ্রিক মাছ, মাশরুম, কমলার জুস, ডিমে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়।
৯। ভিটামিন-ই
ভিটামিন-ই সাধারণত স্নেহ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে বেশি থাকে। যেমন তেল, বাদাম বীজ ।এছাড়া সবুজ শাক সবজিতে এই ভিটামিন পাওয়া যায়।এটি একটি শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট। শরীরের ক্ষত স্থান সারাতে, লোহিত রক্তকনিকাকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে এই ভিটামিন সাহায্য করে। বায়ূ দূষণ, সিগারেটের ধোঁয়া ও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ভিটামিন-ই শিশুদের ত্বক-কে রক্ষা করে।
১০। জিংক
জিংক বা দস্তা আমাদের শরীরের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। জিংক এর অভাবে শিশুদের ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ত্বকের প্রদাহ, ছত্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণজনিত রোগ দেখা দেয়। গরু ও ভেড়ার মাংস, দুগ্ধজাত খাদ্য, শিম, মসুরের ডাল, চিনাবাদাম, মাশরুম, সয়াবিন তেল এবং মাখনে পর্যাপ্ত জিংক রয়েছে।