শরীরচর্চা ও উপকারীতা

“সাস্থ্যই সম্পদ” অর্থাৎ সত্যিকারের সুখীব্যাক্তি হল সুসাস্থের অধিকারী। একজন মানুষ শারিরীক ভাবে ফিট থাকলে জীবনকে সবচেয়ে ভালো উপভোগ করতে পারে। আর ফিট থাকার জন্য কেবল পুষ্টিকর খাবারই যথেষ্ট নয় এর পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা প্রয়োজন।
ব্যায়ামের কথা শুনলেই আমাদের চোখে সবার আগে ভেসে আসে পেশিবহুল হাতে ডাম্বেলের কসরত করা। তাই ব্যায়াম বা শরীরচর্চা এড়িয়ে যাওয়ার মোক্ষম অজুহাত হলো, ‘অতো মাসল, সিক্স প্যাক বা জিরো ফিগার দিয়ে কী হবে? খেয়ে দেয়ে ভালোই তো আছি!’ কিন্তু শরীরচর্চার একমাত্র উদ্দেশ্য এটি নয়। নিয়মিত শরীরচর্চা চালিয়ে যাওয়া একজন মানুষই বুঝতে পারে, দৈনন্দিন জীবনে এটি কতটা আশীর্বাদ বয়ে আনে। শরীরচর্চার অভাবে ক্লান্তি, অবসাদ থেকে শুরু করে আরো নানা রকম রোগ ও সমস্যা শরীরে বাসা বাঁধে। মাসল বা সিক্স প্যাকের আকর্ষণে নয়, সুস্থ ও সবল দেহ পেতেই দরকার শরীরচর্চা। মানুষের মন ও শরীরের মধ্যে একটা ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের সাস্থের উন্নতি করে এবং মনে প্রশান্তি বয়ে আনে।তাই সুসাস্থের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে শরীরচর্চা।শরীরচর্চা

শরীরচর্চা ছাড়া দেহ সম্পূর্ণ সচল হতে পারে না
একগাদা কাজ জমে আছে, অথচ কিছুই করতে ভালো লাগছে না। শরীরের ম্যাজম্যাজ ভাবের কারণে সবকিছুতেই যেন কেমন অনীহা বোধ হচ্ছে। এর পেছনে দায়ী হলো পর্যাপ্ত শরীরচর্চার অভাব। শরীরচর্চা দেহের মেটাবোলিজম বাড়িয়ে দেয়ার সাথে সাথে দেহের সবগুলো অঙ্গকে সচল করা শুরু করে। রক্তপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে সব তন্ত্রে অক্সিজেন পৌঁছে যায় দ্রুত। ফলে প্রতিটি অঙ্গ তার নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য প্রস্তুত হয় এবং একসাথে মিলে দেহকে অনেক বেশি সচল ও সতেজ করে তোলে। এছাড়া পেশী, হাড় ও জয়েন্টগুলো সচল করার পাশাপাশি তাদের সর্বোচ্চ কার্যক্ষম করে তোলে শারিরীক ব্যায়াম। ব্যায়াম শুধু শরীরকেই সচল করে না, সাথে মস্তিষ্কেও সেরিটোনিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে চিন্তাশক্তি আরো সাবলীল হয়, দৈনন্দিন কাজগুলো আরো বেশি দক্ষতার সাথে করা সম্ভব হয়।
শরীরচর্চাবিহীন জীবনযাপন ধূমপানের মতোই ভয়ংকর!

ধূমপান শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর দৈনন্দিন রুটিনে শরীরচর্চা না থাকা ধূমপানের মতোই ক্ষতিকর! ধূমপান চালিয়ে যাওয়া যেভাবে আমাদের ক্ষতি করে, শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকলেও আমাদের দেহ প্রায় ততটুকুই ক্ষতির সম্মুখীন হয়। পৃথিবীর প্রতি ১০ টি অকালমৃত্যুর পেছনে হাত রয়েছে ব্যায়ামের প্রতি উদাসীনতার। হৃদরোগে কাবু করতে দায়ী হলো বিভিন্ন ইনফ্লেমেটরি উপাদান। কিন্তু পেশি যদি নিয়মিত সঞ্চালিত করা হয়, তা থেকে নিঃসৃত হয় নানান অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি রাসায়নিক পদার্থ। এছাড়াও রক্তের শর্করা, কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের নিয়ন্ত্রনের জন্য শরীরচর্চা অনেক বেশি কার্যকর। কিন্তু অলস দেহ এই সুবিধাগুলো পায় না, ফলে নানা রোগের উৎপত্তিস্থল হয়ে যায় শরীর।
যেসব সুবিধা পাবেন:

উদ্দীপনা ও কর্মশক্তি বৃদ্ধি:
দেহ যদি একটি যন্ত্র হয়, শরীরচর্চা তার রক্ষণাবেক্ষণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। আর নিয়মিত শরীরচর্চায় দেহ একটি সচল মেশিনের মতোই কর্মক্ষম থাকবে। এটি বাড়িয়ে দিবে আপনার দৈনন্দিন জীবনের এনার্জি।

নিয়মিত ঘুম:
শরীরচর্চায় দেহের কার্যক্রম সঠিক নিয়মে চলে বলে ঠিক সময়ে ঘুমও চলে আসে। বিছানায় দীর্ঘ সময় এপাশ ওপাশ করা লাগে না, দেহ নিজ নিয়মেই ঘুমে ডুবে যায়। আর সকালে উঠতেও অন্য সময়ের মতো বেগ পেতে হয় না।

স্ট্রেস দূর করে:
নিয়মিত শরীরচর্চা স্ট্রেস হরমোনগুলোর স্তরকে হ্রাস করে। যেমন অ্যাড্রেনালিন ও করটিসলের মতো হরমোন। এটি মস্তিষ্কের এন্ডরফিন্স রাসায়নিকগুলো ও দেহের প্রাকৃতিক ব্যথানাশক এবং মুডলিফটগুলির উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে। তাই শরীরচর্চা বজায় রাখলে মানসিক স্ট্রেস দূরে থেকে আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো সাবলীলভাবে শেষ করার সুযোগ দিবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে:
অন্য অনেক কারণ থাকলেও, মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়লেই মানুষ শরীরচর্চার দ্বারস্থ হয়। আর এতে পাওয়া যায় নিশ্চিত সুফল। মেটাবোলিজম ঠিক রেখে আপনার খাবারের ক্যালরি শরীরে জমতে তো বাধা দেয়ই, সাথে সাথে পুরোনো মেদগুলোও পুড়িয়ে ফেলতে ভূমিকা রাখে ব্যায়াম।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম করা মানুষের দেহে সর্দি-জ্বরের মতো সাধারণ রোগ থেকে শুরু করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও কিছু ধরণের ক্যান্সার আক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। যথাযথ রক্তসঞ্চালন ও পেশির সক্রিয়তা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

পেশি গঠন ও হাড় সবল করে:
সুগঠিত পেশিবহুল দেহ সবাই পেতে চায়। আর শরীরচর্চা ছাড়া এটি পাওয়ার আর কোন উপায় নেই। নিয়মিত শরীরচর্চায় পেশির ভারবহনের ক্ষমতা বাড়ে, এছাড়াও জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ ধীরে ধীরে ঝরে যায়। ফলে সুঠাম গড়নের পাশাপাশি আপনার শক্তিও বেড়ে যায়। এছাড়া হাড় ও জয়েন্টও আরো মজবুত ও শক্তিশালী হয়।

আর্থ্রাইটিস ও অন্যান্য ব্যাথা দূর করে:
আর্থ্রাইটিস বা অন্যান্য বিভিন্ন ব্যাথার উপশমে ব্যয়াম অনেক উপকারী। সাধারণত পরিমিত ব্যয়াম দেহের হাড়ের পাশের পেশি ও টিস্যু গুলোকে শক্তিশালী রাখে।ব্যয়ামের অভাবে সেই সাহায্যকারী পেশিগুলোকে দুর্বল করে এবং হাড়ের জয়েন্টগুলিতে আরো চাপ তৈরি করে। সাধারণত এরোবিক ব্যয়ামগুলো বেশি উপকারী। যেমন হাটা,সাতারকাটা ইত্যাদি।

পিরিয়ডের জটিলতা নিয়ন্ত্রনে রাখে:
আজকাল অতিরিক্ত ওজন এর জন্য পিরিয়ডের জটিলতা অনেকেরই দেখা যায়। নিয়মিত শরীরচর্চা চালিয়ে গেলে পিরিয়ড চলাকালীন ও এর সময় নিয়ে নানা জটিলতা অনেক অংশেই দূরে থাকে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায়।
ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্যান্সারের যারা মারা যায় তাদের প্রায় ৩৫% অতিরিক্ত ওজনের সাথে জরিত।তাই নিয়মিত শরীরচর্চা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ইত্যাদি।
এছাড়াও মানষিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে,চেহারায় বয়সের ছাপ কমাতে,দেহের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমাতে,উচ্চরক্তচাপ কমাতে শরীরচর্চার ভুমিকা অপরিসীম। নিয়মিত শরীরচর্চা ঘামের মাধ্যমে দেহের অতিরিক্ত তাপ বের করে দিয়ে দেহের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং আমাদের স্কিনকে সজীব রাখতে সাহায্য করে।

যতটুকু ব্যায়াম না করলেই নয়:

শরীরচর্চার অভ্যাস একদম শুন্যের ঘরে থাকলে শুরুতেই ঘন্টার পর ঘন্টা ঘাম ঝরাতে হবে না। শরীরচর্চায় সময়ের চেয়েও বেশি জরুরি হলো তা নিয়মিত ধরে রাখা। তাই যতটুকু বা যতটা সময় আপনি নিয়মিত শরীরচর্চা করতে পারেন, তা দিয়েই শুরু করা উচিৎ। অতিরিক্ত ব্যয়াম আবার শরীরের জন্য হানিকর। গবেষণায় বলেছে যারা একেবারেই ব্যয়াম করে না তাদের থেকে যারা দৈনিক ৩ ঘন্টার বেশি ব্যয়াম করে তাদের মানষিক স্বাস্থ্য এর অবনতি ঘটেছে। সাধারণত প্রতিটি মানুষের শারিরীক গঠন, শারীরিক সমস্যা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে কতটুকু ব্যায়াম নিয়মিত করা উচিৎ। সাধারণত দিনে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট শরীরচর্চা করা সবচেয়ে বেশি কার্যকর বলে ধরা হয়।

শরীরচর্চা কোন সাময়িক কাজ নয়, বরং এক ধরণের অভ্যাস। মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে অল্প সময় ধরে করতে থাকুন, কিন্তু নিয়মিত করার চেষ্টা করুন। একদিন মিস হয়ে গেলে হতাশ না হয়ে আবার চালিয়ে যেতে থাকুন। ধীরে ধীরে আপনার এই শ্রম আপনাকে দিবে একটি সবল

facebook.com linkedin.com twitter.com
Categories:

Leave a Reply

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে প্রয়োজন যে ৮টি খাবার
প্রতিটি পরিবারে বাচ্চাদের খাবার নিয়ে থাকে বাড়তি সচেতনতা। বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে, বাচ্চার বয়স
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে কোন ৫টি সমস্যা দেখা দেয়?
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে যে ৫টি সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আয়োডিনের ঘাটতির
পরীক্ষার সময় মনোযোগ ধরে রাখতে ও সুস্থ থাকতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার
স্টুডেন্ট লাইফ মানেই প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা। শিক্ষা জীবনে স্টুডেন্টদের পরীক্ষার মাধ্যমেই ধাপে ধাপে এগিয়ে
দৈহিক সুস্থতায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জিংক কেন প্রয়োজন?
সুস্থ থাকতে হলে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ থাকা চাই। সহজভাবে বলতে চাইলে,
don't worry about summer
প্রচন্ড গরমে নিমিষেই দূর হবে সারাদিনের ক্লান্তি
রোদের তাপ ক্রমশ বাড়ছে তাই না? এদিকে এই গরমের দিনে মিসেস শারমিনকে থাকতে হয় সারাদিন
গরমে সুস্থ থাকতে কেমন খাবার খাওয়া চাই?
ইদানীং অনেক গরম পড়েছে তাই না? চারিদিকে গরমের দাবদাহে জীবন প্রায় অতিষ্ঠ। কিন্তু জীবন-জীবীকার খোঁজে আমাদের
কম খরচে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে খাদ্যতালিকা যেমন হওয়া উচিত
বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন? মাছ-মাংসের দাম শুনলেই মনে হয় বাজারে আগুন লেগে আছে। কিন্তু
DHA এবং ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট
ডোকোসাহেক্সনিক এসিড বা সংক্ষেপে DHA হলো মস্তিষ্ক গঠনের একদম প্রাথমিক উপাদান। সহজ করে বললে DHA
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন কেন জরুরি ?
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভস্থ সন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিতে মায়ের চাই বাড়তি যত্ন ও সব রকমের পুষ্টি
বুদ্ধিতে বৃদ্ধিতে সন্তানের চাই সঠিক পুষ্টি
পুষ্টি ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বাড়ন্ত শিশুর জন্য খুব জরুরি। কেননা জন্মের পর প্রথ এই কয়েক