‘চিনি কম!’- কথাটা শুধুমাত্র যে ডায়াবেটিস ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য, তা কিন্তু নয়! আমাদের সবারই চিনি খাওয়ার পরিমাণটা কমানো উচিত। এমনকি শিশুদেরও!
বাচ্চার সুস্বাস্থ্যে ও হেলথ রিস্ক কমাতে সময় থাকতেই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে তাদের মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণের পরিমাণ। কেননা, অতিরিক্ত চিনিই ভবিষ্যতে অতিরিক্ত ওজনের (ওভার ওয়েট ও ওবেসিটি) অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতি বছর ওবেসিটি এবং ওভার ওয়েট বৃদ্ধি আশংকাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে ৩৮ মিলিয়ন বাচ্চা যাদের বয়স ৫ বছরের নিচে, অতিরিক্ত ওজনের শিকার। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৭ এর মধ্যে অতিরিক্ত ওজনের শিশু বৃদ্ধির হার ৩২ মিলিয়ন থেকে ৩৮ মিলিয়ন। গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত ওজনই ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ, ফ্যাটি লিভার, দাঁতের সমস্যা ও স্থূলতার কারণ।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫ থেকে ১৮ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত বাচ্চাদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ। এই আর্টিকেল-এ আজ আমরা জানবো এমন কিছু তথ্য, যা মেনে চললে আপনার সন্তান রক্ষা পাবে কম বয়সে অতিরিক্ত সুগারের হাত থেকে। তার আগে চলুন ছোট করে একবার জেনে নেয়া যাক, বয়স ভেদে শিশুদের দৈনিক প্রাকৃতিক সুগার ইনটেক-এর পরিমাণঃ
২ – ৫ বছর: ৩০-৪০ গ্রাম
৬ – ১২ বছর: ৫০-৬০ গ্রাম
[ওবিসদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। তাদের আদর্শ সুগার ইনটেকের পরিমাণ জানার জন্য নিঊট্রিশন এক্সপার্টের সাথে যোগাযোগ করুন।]
শুনতে- ‘এ আর এমন কী’ মনে হলেও, এই চ্যালেঞ্জ মেনে চলা কিন্তু সহজ নয়। বাচ্চা তো বাচ্চাই! তবে চিন্তা নেই, টিপস নিয়ে আমরা সবসময়ই হাজির।
এড়িয়ে চলুন কোল্ড ড্রিংকস
সাথে নিয়ে দোকানে গেলেই আমাদের বাচ্চারা কোল্ড ড্রিংকস বা জুস খেতে চায়। তাদের কি আর ‘না’ বলে থামানো যায়! কিন্তু কোল্ড ড্রিংকসে আছে প্রচুর রিফাইন্ড চিনি যা রক্তে দ্রুত চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এতে শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যায় বা শরীরে ফ্যাট জমে যায়। তাই মিষ্টি ফলের জুসে চিনি না মিশিয়ে খাবার অভ্যাস করুন। মিল্কশেকে মিষ্টি ফল যেমন আপেল, কলা, পেঁপে, মধু ব্যবহার করুন।
বেছে নিন লো সুগার-এর খাবার
অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবারের বদলে তাকে কম চিনির খাবার খেতে দিন। এতে তার সুগারের পরিমাণ ঠিক থাকবে। যেমন- চকলেট কোটেড সিরিয়াল-এর বদলে তাকে খেতে দিন ওটস-এর বিস্কুট, টক দই, পিনাট বাটার, জেলি ইত্যাদি। জানি, আপনার সন্তান কখনোই এই পরিবর্তনগুলিকে হাসিমুখে মেনে নিবে না। কিন্তু, অল্প অল্প করে তার খাবারের অভ্যাসে পরিবর্তন আনলে সে এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে। এই পরিবর্তনের কারণে পরবর্তীতে তার এমন একটি লাইফ স্টাইল তৈরি হবে, যা তাকে ভবিষ্যতে সুস্থ রাখবে।
সুগারের পরিবর্তে ফল
মিষ্টি কিছু খেতে হলে মিষ্টি ফল যেমন খেজুর, কলা, পাকা পেঁপে, তরমুজ, ড্রাগন ফল, লাল আপেল, নাশপাতি ইত্যাদি খেতে দিন।
সুগারের পরিবর্তে মধু বা গুঁড়
সারা বিশ্বে এখন অন্যতম স্লোগান হল হোয়াইট সুগারকে না বলুন। তাই চিনির পরিবর্তে মধু বা গুঁড় ব্যবহার করতে পারেন। চিনি খেলেও খান লাল চিনি।
চোখের আড়াল তো মনের আড়াল
অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার তার চোখের সামনে থেকে দূরে রাখুন। এতে তার অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার না খেয়ে থাকার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সচরাচর তার চোখের সামনে অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার রাখবেন না। যদি রাখেন তবে তার হেলদি অভ্যাস গড়ে তোলার কথা ভুলে যান। তাই, তার এই অভ্যাস করতে চাইলে আপনার পুরো পরিবারের ডায়েট বদলে ফেলুন।
মনে রাখবেন, পরিবর্তন একদিনে আসে না। তাই ছোট ছোট স্টেপ নিয়ে গড়ে তুলুন আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।