আমরা সবাই হেলদি ফুড খেয়ে হেলদি থাকতে চাই। কিন্তু আমরা প্রায়সময় ভুলে যাই রান্নার কথা, যা খাদ্য থেকে অনেক নিউট্রিশনাল বেনিফিট দূর করে দিতে পারে। সাধারণত ভুল ভাবে রান্নার ফলে খাদ্যের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলো অনেকটাই কমে যায়। এই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলো হচ্ছে ভিটামিন ও মিনারেলস।
আপনি কি জানেন বয়েলড ব্রকলি আর স্টিমড ব্রকলির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে? এই হেলদি খাবারগুলোই ভুল ভাবে রান্নার ফলে আর হেলদি থাকে না।অর্থাৎ খাবারে উপস্তিত পুষ্টিগুন অনেকেটাই কমে যায়। আসুন এক এক করে এসব রান্নার পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
সেদ্ধ করা
সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে- যা পানির সাথে রান্না করলে কমে যায়। সিদ্ধ করে রান্না করলে ব্রকলি, শাক এবং লেটুস ৫০% ভিটামিন সি হারিয়ে ফেলে।
গ্রিল করা
গ্রিল করা মাংস কমবেশি আমরা সবাই পছন্দ করি। যদিও এই প্রসেস-এ প্রায় ৪০% ভিটামিন বি ও মিনারেল কমে যায় কারণ, এতে মাংসের নিউট্রিশনসমৃদ্ধ রস শুকিয়ে যায়। এছাড়াও, যখন মাংসের চর্বি গলে গরম সার্ফেস-এ পড়ে সেখান থেকে জন্ম নিতে পারে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান। তবে ধোঁয়া কমানো সম্ভব হলে ও মাংসের উপরের পোড়া আস্তর খাওয়া এড়িয়ে চললেই ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান তৈরি হবার সম্ভাবনা ৮৯% কমে যায়।
মাইক্রোওয়েভিং
মাইক্রোওয়েভ-এ অনেক কম সময় লাগে বলে এতে নিউট্রিয়েন্টের পরিমাণ রক্ষা পায়। এটি মাশরুম ও গার্লিক-এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্ষা করার সবচেয়ে ভালো উপায় – মাত্র ২০-৩০% ভিটামিন সি কমায়!
বেকিং
এই পদ্ধতিতে খাদ্যকে শুকনো অবস্থায় তাপ দিয়ে রান্না করা হয়। যেহেতু এটিতে পানি ব্যবহার করা হয় না, তাই এতে অনেক পরিমাণে ভিটামিন কমে যায়। আর যদি এটিকে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা হয়, তবে ভিটামিন বি ৪০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
সটেইং এবং ষ্টার–ফ্রাইং
এই পদ্ধতিতে অল্প পরিমাণে তেল অথবা বাটার ব্যবহার করে মধ্যম থেকে উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা হয়। যেহেতু এটিতে কম সময় লাগে তাই ভিটামিন বি কমে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। পাশাপাশি ফ্যাট ব্যবহার করার কারণে শরীরে প্ল্যান্ট কম্পাউন্ডস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বিভিন্ন পরীক্ষায় জানা যায়, এই পদ্ধতিতে রান্না করলে ব্রকলি, রেড ক্যাবেজ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি হারায়।
ফ্রাই করা
এই পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট বিশেষ করে তেল ব্যবহার করে উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা হয়। এটি একটি অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি। কেননা, এর কারণে মোটা হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে হার্টের অসুখ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস হতে পারে। কিন্তু, এই পদ্ধতিতে রান্না করলে খাবারের ভিটামিন বি এবং সি ঠিক থাকে। যদি এই পদ্ধতিতে রান্না করতেই হয়, তবে চেষ্টা করবেন হেলদি তেল যেমন ভেজিটেবল তেল অথবা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে।
বাষ্পীভূত করা
এটি ওয়াটার সলেবল ভিটামিনসহ খাদ্যের নিউট্রিয়েন্ট ধরে রাখার অন্যতম ভালো উপায়। এই পদ্ধতিতে রান্না করলে স্টিমড ব্রকলি, শাক এবং লেটুস মাত্র ৯-১৫% ভিটামিন সি হারায়। বাষ্পীভূত পদ্ধতিতে রান্না করার প্রধান সমস্যা হল, এটিতে স্বাদ তেমন ভালো হয় না। তবে, অতিরিক্ত উপাদান যেমন সস ব্যবহার করলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
সাধারণত আজকালকার সময়ের সল্পতার জন্য উপরোক্ত পদ্ধতিগুলোতে আমাদের প্রায়ই রান্না করা হয়ে থাকে। এতেকরে খাদ্যের পুষ্টিগুন অনেকটাই কমে যাচ্ছে। আর তাই আজকাল আমাদের সমস্যার ও যেন কমতি নেই, দেহে বাসা বাধছে নানা ধরনের জটিলতা। অনেকেরই ধারণা অনেক শাকসবজি খাওয়া হচ্ছে, অর্থাৎ হেলদি ফুড গ্রহণ করা হচ্ছে, তাহলে আবার এতো সমস্যা কেন? আসলে সমস্যাটা হল ভুলভাবে রান্নার ফলে খাবারের সঠিক পুষ্টিগুন বজায় থাকে না।
তাই যখনই হেলদি ফুড গ্রহণ করা হবে তা যেন সত্যি হেলদি হয়, অর্থাৎ তাতে উপস্থিত ভিটামিন ও মিনারেলস যেন রক্ষা করা হয় সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। পরিমানমত মসলা,তেল পানি সহ ঢাকনা দিয়ে ঢেকে চুলায় অল্প আঁচে রান্না করা খাবারের পুষ্টিগুন অধিক পরিমাণে বজায় থাকে।
তাই আপনি যখনই আপনার পরিবারের জন্য রান্না করেন না কেন, চেষ্টা করবেন সবচেয়ে ভালো পদ্ধতিতে রান্না করতে। তা না হলে, হেলদি ফুডও হারিয়ে ফেলবে তাদের শক্তি।