ঋতু বদলানোর সাথে সাথেই ছোট বড় নানা রোগে আক্রান্ত হয় বাচ্চারা যা ওদের বিকাশে বিঘ্ন ঘটায়। এই ‘সিজন চেঞ্জ’ এর সময়ে সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বর, এলার্জি ও শ্বাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। পাশাপাশি জলবসন্ত, হাম, টাইফয়েড ইত্যাদি তো আছেই! পুরোপুরি এড়ানো না গেলেও কিছু সতর্কতা মানলে এই ‘সিজন চেঞ্জ’ এর ঝামেলায় পর্যুদস্ত হতে হবে না
ঋতুভেদে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয় সূর্যের আলোর। দিনের দৈর্ঘ্য ও তাপমাত্রা- দুটিই বদলায় নতুন ঋতু এলে। এই তারতম্য প্রকৃতি যেভাবে করে বরণ করে নিতে পারে, বাচ্চাদের কোমল দেহ তেমনটা পারে না।
এছাড়া সূর্যের আলো দেহে ভিটামিন ডি তৈরিতে সাহায্য করে। কম সূর্যের আলোতে দেহে ভিটামিন-ডি স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা কম থাকে। সূর্যের আলোতে বেশিক্ষণ থাকলে যেমন ক্লান্তি, পানিশূন্যতা, চোখের ও ত্বকের ক্ষতি ইত্যাদি অসুবিধা হয়, আবার দেহ পর্যাপ্ত পরিমাণ রোদের স্পর্শ না পেলেও বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হবে। তাই চেষ্টা করতে হবে সকালবেলার কিছুটা সময় বাচ্চাদের একটু সূর্যে নিচে কাটানোর । এতে নানা ধরণের শারিরীক সমস্যার সমাধান সহজেই পাওয়া যাবে।
সর্দি-কাশির প্রাদুর্ভাব এই ঋতু বদলানোর শুরুতেই বেশি হয়। এর প্রধান কারণ হলো সর্দির জন্য দায়ী ভাইরাসগুলো এই সময়ের তাপমাত্রায় বেশি কার্যকর হয়ে উঠে। আর শুষ্ক বাতাস সাইনাসের ভেতরের দেয়ালে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। তাই অন্যের সংক্রমণে আপনার ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। সাইনাস শুকনো থাকলে এই রোগে ভুগতেও হবে বেশি। তাই পানি ও বিভিন্ন তরল খাবার বেশি করে খেলে সর্দির সমস্যা কিছুটা হলেও কম ভোগাবে।
এই সময়গুলো এলার্জির সমস্যায় ভোগা মানুষদের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো বাতাসে ভেসে বেড়ানো এলার্জির অনুঘটক (যেমন ফুলের মুকুল, বিভিন্ন ছত্রাক)। এই এলার্জি থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহারের তেমন কোন কার্যকর বিকল্প নেই। তাই বাইরে বের হওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন আপনার বাচ্চা যাতে মাস্ক ব্যবহার করে। আর এলার্জির আক্রমণ যদি হয়েই যায়, তবে করলা, নিম, চিরতা ইত্যাদি তিতা খাবার খেতে দিতে পারেন। বাচ্চাদের গোসলের সময়ও নিমপাতা সেদ্ধ পানি ব্যবহার করতে পারেন।
ঋতু পরিবর্তন যেন আপনার ভোগান্তির কারণ না হতে পারে, সে জন্য যে বাচ্চাদের দিকে খেয়াল রাখতে যে কাজগুলো করবেন-
⦁ সঠিক সময়ে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর চেষ্টা।
⦁ সারাদিন আবদ্ধ স্থানে না থেকে বাইরে কিছু সময় কাটান।
⦁ বাইরে মাস্ক ব্যবহার করা।
⦁ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
⦁ বাইরে থেকে এসে হাত ধোয়া এবং কিছু খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করা।
⦁ ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ধূলামুক্ত রাখবেন।
খাবারের ব্যাপারে এই ঋতুতে সতর্কতা পালন করা খুবই জরুরি। বিভিন্ন রোগ ও সমস্যার প্রতিরোধে যেমন কিছু খাবার খেতেই হবে, তেমনই কিছু খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
বাচ্চাদের খাবারে যা রাখবেন:
ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন এ- যুক্ত খাবারে থাকে বিভিন্ন এন্টি অক্সিডেন্ট। এই সময়ে নানা রোগবালাইয়ের প্রতিরোধে এগুলো অনেক বেশি কার্যকর। কমলা, বাতাবি লেবু, অংকুরিত ছোলা, টমেটো, পেয়ারা ইত্যাদিতে আছে প্রচুর ভিটামিন-সি যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফুসফুসের যেকোনো সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ভিটামিন-ডি৩ এর জুড়ি নাই। তাই প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল ৩ তার মাঝে অন্তত ১৫ মিনিট ত্বককে সূর্যের আলো পড়তে দিন।
সামুদ্রিক মাছ: সেলেনিয়াম ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস হিসেবে সামুদ্রিক মাছ অনেক সমৃদ্ধ। এই পুষ্টি উপাদানগুলো পাওয়া যাবে ইলিশ, কোরাল, ছুরিমাছ, ম্যাকারেল, লইট্টা, খল্লা ইত্যাদি- যা ফুসফুসে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।
দই: রোগ প্রতিরোধে দইয়ের ভূমিকাও অনেক। তবে মিষ্টি দইয়ের চেয়ে টক দই খেলে অতিরিক্ত চিনির ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানো সম্ভব।
আদা: আদার এন্টিফ্ল্যামেটরি গুণ সাইনাসের সংক্রমণ ও জয়েন্ট ফুলে যাওয়ার সমস্যা সমাধান করতে পারে।
মাশরুম: মাশরুম একই সাথে সহজপাচ্য ও রক্তের শ্বেতকণিকা বাড়াতে সাহায্য করে।
তুলসি: শ্বাসজনিত রোগের উপশম ইত্যাদিতে তুলসি ভূমিকা রাখে।
মুরগির সুপ: ব্রঙ্কাস ইনফেকশন রুখতে সাহায্য করে মুরগির সুপ। আর এতে থাকে অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা সিস্টেন ভাইরাসের সংক্রমণ দূরে রেখে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া এতে আদা ও রসুন দিয়ে রান্না করলে আরো বেশি পুষ্টিকর ও উপাদেয় হয়ে উঠবে।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন
বাদাম: এলার্জির সমস্যায় ভুগলে বাদাম আরো বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এ সময় বাদাম এড়িয়ে চলাই ভালো।
লাল মাংস: গরু বা খাসির মাংস এলার্জির সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
অতিরিক্ত চিনি, লবন বা মসলাযুক্ত খাবারও সুস্বাস্থ্যের জন্য এড়িয়ে চলাই ভাল। বাহিরের খাবার দেয়ার সময় লক্ষ রাখবেন খাবার যাতে ফ্রেশ থাকে এবং বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি যাতে ব্যবহার করে খাবারের জন্য।