মা ও বাচ্চার সুস্বাস্থ্যে, দুজনেরই চাই হেলদি খাবার

একজন সুস্থ মা’ই পারে একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে। তাই প্রেগন্যান্সির সময় একজন মাকে দুজনের জন্যই খেতে হয় পুষ্টিকর সুষম খাবার। এর কারণে মা অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি করে ফেলে। প্রেগন্যান্সির সময় পুরোটা ধ্যান সাধারণত বাচ্চার সুস্থতার দিকেই থাকে তাই এ সময় অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বাড়তি কোন টেনশন থাকে না মায়েদের। কিন্তু বাচ্চাটির সুস্থ ভাবে ডেলিভারির পর আস্তে আস্তে এই বাড়তি ওজন নিয়ে মায়েরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরে। প্রথমত অতিরিক্ত ওজনের জন্য তার চলাফেরা, দৈনিক কাজ আর বাচ্চার সঠিক ভাবে দেখাশোনা করতে সম্যস্যাতে পরতে হয় এছাড়া বাহ্যিকভাবে ফিটনেস হারানোর ফলে মানষিক ভাবেও অনেকটা ভেঙে পরেন।তাই শুরু হয়ে যায় অতিরিক্ত ওজন কমানোর নানান চেষ্টা। কিন্তু একটি শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য দুই থেকে আড়াই বছর টানা বুকের দুধ খাওয়ানো উচিৎ। তাই এসময় ওজন কমানোর জন্য ডায়েটের কথা একদমই ভাবা যাবে না।

ডেলিভারির পর সন্তান বুকের দুধ থেকে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পায়। তাই, দু’জনের জন্য খাওয়া আপনার এখনও বন্ধ হয়নি। একারণে, এসময় মায়েদের শরীরে থাকা দরকার পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান, যা মা ও বাচ্চা দুজনের চাহিদা পূরণ করে দুজনকেই রাখবে হেলদি। ব্রেস্টফিড করা মায়েদের শরীরে দৈনিক ৫০০ কিলো ক্যালরি এক্সট্রা থাকা লাগে। কেননা আপনার শরীরে সংরক্ষিত ভিটামিন ও মিনারেল থেকে ব্রেস্টমিল্ক-এর নিউট্রিয়েন্ট তৈরি হয়। তাই, বাচ্চাকে ও নিজেকে হেলদি রাখার জন্য প্রতিদিন হেলদি খাবার খান। ব্রেস্টমিল্ক-এর পাশাপাশি নিজেকে হেলদি রাখার জন্য প্রতিদিন যেসব খাবার আপনার ডায়েটে রাখতে পারেন-

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য চাই দুধ, ডিম, মাছ

ডকোসা-হেকসেইনোইক এসিড ( ডিএইচএ) ইহা বিভিন্ন কোষের প্রধান উপাদান, বিশেষ করে মস্তিষ্কের নিউরন, রেটিনা কোষ এবং ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত, শরীরে অল্প অল্প করে ডিএইচএ তৈরি হয় যা মায়ের জন্য পর্যাপ্ত হলেও বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত হয় না। এজন্য, এর উৎপাদন বাড়াতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ বিশেষ করে স্যালমন এবং টুনা, ডিম ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হয়।

হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম

ক্যালসিয়াম বাচ্চার হাড় সুগঠিত ও শক্ত দাঁত গঠনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিশুর জন্য মায়ের দেহে দুধ উৎপাদনের জন্য দেহ প্রচুর ক্যালসিয়াম ব্যবহার করে। তাই, মায়েদের দৈনিক ১০০০-১৫০০ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা প্রয়োজন। এজন্য বেশি বেশি দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার, সিরিয়াল এবং শাক-সবজি খাওয়া উচিত।

কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার

সাধারণত শস্যজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকে। এছাড়াও কিছু সব্জি যেমন আলু, মিষ্টি আলু, কুমড়ো, কচু আর মাটির নিচের সব্জিতে পাওয়া যায়। মিষ্টি ফলেও প্রচুর কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। এই কার্বোহাইড্রেট মায়ের শরীরে শক্তির যোগান দেওয়ার পাশাপাশি দেয় ভিটামিন ও মিনারেল। তবে, এই কার্বোহাইড্রেট-এর পরিমাণ নিশ্চিত করতে তার উৎস হিসেবে সাদা ময়দা,অতিরিক্ত ভাত সাদা চিনির পরিবর্তে ব্রাউন সুগার পরিমিত পরিমানে ভাত ও লাল আটার রুটি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।এতে করে বাড়তি ওজন অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়।

গ্রোথ বাড়াবে প্রোটিন

আপনার শিশুর দেহকোষের গ্রোথ ঠিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন প্রয়োজন। যেহেতু ব্রেস্টফিড করা মায়েরা দু’জনের জন্য পুষ্টির যোগান দেন, তাই তাদের ওজনের প্রতি কেজির জন্য ১.৫ থেকে ২ গ্রাম প্রোটিন থাকা প্রয়োজন। প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাংস, মাছ, ডিম, বাদাম, দুধ এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

ভিটামিন

ভিটামিন এ, বি, সি, ডি, ই এবং কে ব্রেস্টফিড করা মায়েদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। জন্মের সময় বলতে গেলে প্রায় সব বাচ্চার শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব থাকে। বাচ্চার এই অভাব পূরণের জন্য মায়ের ডায়েটে মাছ, কলিজা, মিষ্টি আলু, কুমড়া, গাজর, পাকা আম কলা অর্থাৎ লাল হলুদ রঙের সবজি ও ফল প্রচুর পরিমানে থাকা উচিত- যাতে সেগুলোর পুষ্টি সন্তানের দেহেও পৌঁছে। ভিটামিন ই সন্তানের পেশি সুগঠিত করতে সাহায্য করে। তাই, মায়ের খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ই নিশ্চিত করার জন্য সানফ্লাওয়ার অয়েল দিয়ে আপনার খাবার রান্না করার পাশাপাশি স্ন্যাকস হিসেবে বাদাম খাওয়া উচিত। বাচ্চা ব্যথা পেলে বা তার কোথাও কেটে গেলে সেটা রিকভার করতে সাহায্য করে ভিটামিন কে। তাই মায়ের ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার শাক, ব্রকলি , আংগুর, বাধাকপি সবুজ রঙের ফলমূল সবজি ইত্যাদি ডায়েটে রাখা উচিত। ভিটামিন সি বাচ্চার কোষ রিপেয়ার, হিলিং প্রসেস ও শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী হোয়াইট ব্লাড সেল তৈরিতে সহায়তা করে। এজন্য মায়েদের প্রতিদিন একটি করে হলেও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খাওয়া উচিত । ভিটামিন ডি বাচ্চার হাড় শক্ত করে। তাই বাচ্চাকে প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট সূর্যের আলোতে রাখার পাশাপাশি আপনার খাবারের তালিকায় দুধ, ডিম, কলিজা রাখুন- যাতে আপনার শরীর পায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি।

আপনি হেলদি থাকলে, হেলদি থাকবে আপনার সন্তানও। তাই নতুন মায়েরা এখনই ডায়েটে গিয়ে শরীরের ক্যালরি ঝেড়ে ফেলার চেষ্টায় না গিয়ে সঠিক ভাবে সুষম খাবার গ্রহণ করুন। বাচ্চাকে বেশী বেশী বুকের দুধ পান করান। সন্তানকে সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করুন। মনে রাখবেন বাচ্চাকে বেশিকরে দুধপান শুধু মাত্র আপনার বাচ্চার বিকাশেই জরুরি নয় বরং আপনার শরীরের সুস্থতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শরীরের বাড়তি মেদ কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।

facebook.com linkedin.com twitter.com
Categories:

Leave a Reply

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে প্রয়োজন যে ৮টি খাবার
প্রতিটি পরিবারে বাচ্চাদের খাবার নিয়ে থাকে বাড়তি সচেতনতা। বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে, বাচ্চার বয়স
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে কোন ৫টি সমস্যা দেখা দেয়?
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে যে ৫টি সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আয়োডিনের ঘাটতির
পরীক্ষার সময় মনোযোগ ধরে রাখতে ও সুস্থ থাকতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার
স্টুডেন্ট লাইফ মানেই প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা। শিক্ষা জীবনে স্টুডেন্টদের পরীক্ষার মাধ্যমেই ধাপে ধাপে এগিয়ে
দৈহিক সুস্থতায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জিংক কেন প্রয়োজন?
সুস্থ থাকতে হলে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ থাকা চাই। সহজভাবে বলতে চাইলে,
don't worry about summer
প্রচন্ড গরমে নিমিষেই দূর হবে সারাদিনের ক্লান্তি
রোদের তাপ ক্রমশ বাড়ছে তাই না? এদিকে এই গরমের দিনে মিসেস শারমিনকে থাকতে হয় সারাদিন
গরমে সুস্থ থাকতে কেমন খাবার খাওয়া চাই?
ইদানীং অনেক গরম পড়েছে তাই না? চারিদিকে গরমের দাবদাহে জীবন প্রায় অতিষ্ঠ। কিন্তু জীবন-জীবীকার খোঁজে আমাদের
কম খরচে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে খাদ্যতালিকা যেমন হওয়া উচিত
বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন? মাছ-মাংসের দাম শুনলেই মনে হয় বাজারে আগুন লেগে আছে। কিন্তু
DHA এবং ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট
ডোকোসাহেক্সনিক এসিড বা সংক্ষেপে DHA হলো মস্তিষ্ক গঠনের একদম প্রাথমিক উপাদান। সহজ করে বললে DHA
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন কেন জরুরি ?
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভস্থ সন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিতে মায়ের চাই বাড়তি যত্ন ও সব রকমের পুষ্টি
বুদ্ধিতে বৃদ্ধিতে সন্তানের চাই সঠিক পুষ্টি
পুষ্টি ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বাড়ন্ত শিশুর জন্য খুব জরুরি। কেননা জন্মের পর প্রথ এই কয়েক