একটি শিশু জন্মানোর পরে তার প্রথম ও প্রধান খাদ্য হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ। শিশু জন্ম গ্রহণ এর পর প্রথম মায়ের বুকের দুধ পান কে শিশুর প্রথম টিকা বলা হয়। কারন মায়ের বুকের দুধ শুধু মাত্র শিশুটিকে শক্তির যোগানই দেয় না বরং তার রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই জন্মলগ্ন থেকে প্রায় দুই থেকে আড়াই বছর শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানো উচিৎ।মূলত শিশু জন্মানোর ৬ মাস ধরে শুধু মাত্র মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট এমনকি পানির ও প্রয়োজন নেই। ৬ মাস বয়সের পর দুধের পাশাপাশি অনান্য
পরিপুরক খাবার দেয়া হলেও শিশুর ৬ মাস বয়সেও বুকের দুধই তার একমাত্র নিউট্রিশন-এর উৎস। এসময় এটিই তার বিকাশের জন্য একমাত্র সহযোগী উপাদান। তাই, এই বয়সে শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ খাওয়ানো খুবই জরুরী। একজন মা সাধারণত ৮-১২ বার ব্রেস্টফিডিং করেন। কিন্তু, সমস্যা হয় নতুন মায়েদের জন্য। কারণ, তার গ্রন্থিতে শিশুর জন্য পর্যাপ্ত দুধ সৃষ্টি হয় না। ফলে, তারা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। যেহেতু প্রায় সব নতুন মা-ই এই সমস্যা ফেইস করেন, তাই খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কিছু খাবার আছে, যা একজন মায়ের দৈনিক খাবারের তালিকায় যুক্ত করলে শিশু পাবে পর্যাপ্ত দুধ।
সাধারণত বুকের দুধ বৃদ্ধিতে লাউ আর কালিজিরার গুনাগুন কমবেশি আমাদের সবারই জানা। তাইতো নতুন মায়ের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন যুক্ত হয় লাউ তরকারি আর কালিজিরার র্ভতা। কিন্তু এগুলো ছাড়াও আরও বেশকিছু খাবার আছে যা কিনা নতুন মায়ের বুকের দুধ বারানোর পাশাপাশি তাকে দিবে প্রচুর শক্তি আর পুরন করবে তার নিউট্রিশনের ঘাটতি।
খেঁজুর
শক্তির বৃদ্ধির অন্যতম উৎস হিসেবে পরিচিত খেজুর। তবে খেজুর মায়ের বুকের দুধের উৎপাদনও বৃদ্ধি করে। খেজুরে থাকে প্রোল্যাকটিন, যা বুকের দুধ উৎপাদনের হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তাই, পরবর্তীতে যখন মিষ্টি জাতীয় খাবার খাবার ইচ্ছা হবে তখন আপনার স্মুদি, কাস্টার্ড অথবা দইয়ে খেঁজুর যুক্ত করুন।
মেথি
মেথি মায়ের বুকের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য স্তনের গ্রন্থিগুলোকে উদ্দীপিত করে। চা, পানি, এমনকি পরোটা, পুরি অথবা রুটির সাথেও মেথি মিশিয়ে খাওয়া যায়।
পানি
দুধের অন্যতম মুল উপাদান পানি। একজন নতুন মায়ের প্রতিদিন ৮-১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে। এছাড়াও, ফলের জুস এবং দুধ আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। কেননা, এগুলো আপনার শরীরের পর্যাপ্ত মিনারেল এবং ভিটামিন গ্রহণের পরিমাণ নিশ্চিত করে দুধের প্রবাহ ঠিক রাখে।
বার্লি
বার্লিতে থাকে বেটা-গ্লুকান, এক ধরণের পলিসেক্রাইড, যা বুকের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিকারী হরমোন- প্রোল্যাকটিনের পরিমাণ বাড়ায়। এছাড়াও এটি বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিক রেখে মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে রক্ষা করে। আপনি পানির সাথে বার্লি ফুটিয়ে খেতে পারেন। আবার চাইলে স্বাদ বৃদ্ধির জন্য লেবু ও মধু মিশিয়েও খেতে পারেন।
ওটস
ওটস-এ থাকে প্ল্যান্ট এস্ট্রোজেন, যা দুধের গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করে। এটি আয়রন ও বেটা- গ্লুকান সমৃদ্ধ হওয়ায়, বুকের দুধ খাওয়ানো প্রতিটি মায়েদের খাবারের তালিকায় এটি রাখা উচিত। প্রতিদিন ব্রেকফাস্টে ওটমিল রাখুন, বৃদ্ধি করুন আপনার বুকের সারাদিনের দুধের উৎপাদন।
রসুন
এটি শুধুমাত্র আমাদের ইমিউন সিস্টেমকেই স্ট্রং করে না , মায়ের দুধ বাড়াতেও সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত খাওয়া হলে দুধের সাথে রসুনের গন্ধ পাওয়া যায় যা কিনা শিশুর দুধ পানের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তাই পরিমিত পরিমানে খাওয়া উচিত।
মউরি
ইহা একধরনের মসলা। মায়ের দুধ বাড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও অনান্য যে খাবারগুলো মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে সহায়ক তার মধ্যে রয়েছে –
কাঁচা পেপে, গাজর, সবুজ শাক (বিশেষ করে পালংশাক), করল্লা, মিষ্টি আলু, বীট, মাসকলাই এর ডালসহ অনান্য ডাল, সব্জি দিয়ে বাচ্চা মুরগির স্যুপ, দুধএবং দুধের তৈরি বিভিন্ন ডেজার্ট, সাগু দিয়ে তৈরি খিচুড়ি বা পায়েস, তাজা ফলের জুস ইত্যাদি।
কিন্তু শুধুমাত্র এই খাবার গুলো খেলেই হবে না – নতুন মাকে অবশ্যই নিতে হবে প্রচুর পরিমানে বিশ্রাম আর থাকতে হবে দুশ্চিন্তা মুক্ত। অতিরিক্ত পরিমানে স্ট্রেস মায়ের দুধ উৎপাদনে বাধা প্রদান করে।