বাচ্চারা এক খাবার বারবার খেতে চায় না. আর তাই বাচ্চাদের খাবারে বৈচিত্র্য আনতে চেষ্টা করেন সব মায়েরা। আমাদের দেশে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের রঙ-বেরঙের ফল এবং শাক সবজি একই সাথে খেতেও মজা এবং পুষ্টিকর। এই কালারফুল শাক সবজি এবং ফলমূল দিয়ে খাবার রান্না করলে বাচ্চারা খাবারের প্রতি আগ্রহি হয়ে উঠে এবং অনেক মজা করে খায়।
হলুদ
কলা, নাশপাতি, আনারস, বাঙ্গি, কুমড়া ফুল, ক্যাপসিকাম, ভুট্টা, মধু, মুগ ডাল, হলুদ গুঁড়া ইত্যাদিতে থাকে ক্যারখয়ায়নয়েড।এটি একটি প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান। এই উপাদানটিই এসব খাদ্য উপাদানের হলুদ হওয়ার কারণ। খাবারের সাথে শরীরে প্রবেশের পর তা ‘ভিটামিন এ’ হয়ে ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতেও ‘ভিটামিন-এ’ অপরিহার্য। ত্বকের পাশাপাশি চোখকে ভালো রাখতেও ভূমিকা রাখে। এন্টি-অক্সিডেন্টের উৎস হিসেবেও এসব খাবারের জুড়ি নেই। তারুণ্য ধরে রাখা থেকে শুরু করে ক্লান্তি দূর করা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, প্রাণোচ্ছলতা ধরে রাখতে এন্টি অক্সিডেন্ট ভূমিকা রাখে। হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতেও হলুদ রঙের খাবারে থাকা ক্যারোটিনয়েড ভূমিকা রাখে। ক্যারোটিনয়েডের এন্টি ইনফ্লামেটরির জন্য হৃদরোগ এর প্রদাহ কমাতে ইতিবাচক ভুমিকা রাখে ধমনীর দেয়ালগুলো ব্লক হতে বাধা দিয়ে থাকে। টিউমারের অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধি ও এস্ট্রোজেন ছড়িয়ে পড়া থামাতে এই উপাদানটি বেশ কার্যকর। এছাড়া ‘ভিটামিন-সি’ এর উৎস হিসেবেও এই ধরণের খাবার খাওয়া যেতেই পারে। তাই দৈনিক খাবারের তালিকায় হলুদ রঙের খাবার থাকা জরুরি।
কমলা
অনেক রঙের সমাহারের মাঝেও কমলা রংটিকে যেমন করে এড়িয়ে যাওয়া যায় না, তেমনি কমলা রঙের খাবারের গুনাগুণও এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব। গাজর, মিষ্টি কুমড়া, কমলালেবু, মালটা, পেঁপে, এপ্রিকট, মসুরের ডাল ইত্যাদি খাবারগুলো শুধু দেখতেই মনোহর নয়, পুষ্টিগুণেও এই ফলমূল ও সবজি সেরাদের তালিকায় থাকে। অধিকাংশ কমলা রঙের ফলে থাকে প্রচুর পরিমান ভিটামিন-সি। আর ‘ভিটামিন-সি’ এর উপকারিতার শেষ নেই বললেই চলে। সিজনাল জ্বর-ঠান্ডা নিরাময় থেকে শুরু করে দেহে আয়রন শোষণ, ত্বক-দাঁত-চুল ভালো রাখা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ইত্যাদিতে এটি ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমাদের শরীর ভিটামিন-সি জমিয়ে রাখতে পারে না। তাই নিয়মিত খাবারের তালিকায় ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার রাখা আবশ্যক। আর কমলা রঙের ফল বা সবজি থেকেই পেতে পারেন আপনার নিত্যদিনের জন্য দরকারি ভিটামিন-সি। কমলা খাবারে আরো থাকে বেটা ক্যারোটিন। এই উপাদানটির জন্যই বিভিন্ন ফল, শস্য ও সবজিতে কমলা রং দেখা যায়। মজার ব্যাপার হলো, বেটা ক্যারোটিন নামটিই এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ক্যারোটা’ থেকে, যার অর্থ হচ্ছে গাজর! এই বেটা ক্যারোটিন হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস, সুর্যের আলো থেকে ত্বককে রক্ষা করা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ইত্যাদি ভূমিকা রাখে। এছাড়াও পটাশিয়াম, ফাইবার, ফলিক এসিড, ব্রোমেলাইন ইত্যাদি পাওয়া যায় এই কমলা রঙের খাবারে। তাই খাবারের সময় প্লেটে কমলা খাবার তুলে নিতে কোন দ্বিধার সুযোগই নেই!
লাল
রঙের রাজ্যে লাল যেমন গুরুত্বপূর্ণ, এই রঙের খাবারগুলোও আমাদের দেহের জন্য বিশেষভাবে দরকারি। লালশাক, ডাটা, টমেটো, বীট, ক্যাপসিকাম, আপেল, স্ট্রবেরি, বেদানা, জাম্বুরা, লাল আঙুর, চেরি, তরমুজ, পেঁয়াজ, লাল রঙের শস্য ইত্যাদি খাবার আমরা সহজেই পেতে পারি। দৃষ্টিনন্দন আর মুখোরোচক তো বটেই, সাথে শরীরের উপকারেও তারা নানাভাবে ভূমিকা রাখে। লাল খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমান লাইকোপিন ও অ্যান্থোসায়ানিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায়। মূলত লাইকোপিনের জন্যই আমরা খাবারে লাল রঙের দেখা পাই। বাচ্চার হার্ট হেলথ ভালো রাখা ও ক্যান্সার দূরে রাখা থেকে শুরু করে দৃষ্টিশক্তির ক্ষয়রোধ, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা দূর করা ইত্যাদিতে ভূমিকা রাখে এই উপাদানগুলো। ভিটামিন-এ এবং সি এই খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আমরা পেতে পারি। এছাড়া পটাশিয়াম, ফাইবার, ফ্লাভনয়েডসের উৎস হিসেবেও এগুলো উল্লেখযোগ্য। হাঁপানি ও এলার্জি সমস্যার সমাধানে রয়েছে এদের ভূমিকা।
এ সকল রঙিন খাবার গুলোতে থাকে প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেলস।তাই সব ঋতুতে এই রঙিন খাবার খাওয়ার অভ্যাস কিন্তু ধরে রাখতে হবে।