প্রি-স্কুল বয়সী শিশুর মানসিক বিকাশ

প্রি-স্কুল এর সময়টা আপনার সন্তানের শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক বিকাশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন তার চারপাশের পরিবেশ তার চিন্তা ও ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখে। আপনার প্রি-স্কুল বয়সী সন্তানের মানসিক বিকাশে তার সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ এবং তার চিন্তা-ভাবনা ও ব্যক্তিত্ব গঠনে কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ, তা নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।


সন্তানের কল্পনার জগৎ-কে মূল্যায়ন করুনঃ
প্রি-স্কুল বয়সে আপনার সন্তান ধীরে ধীরে তার মানসিক জগত-কে প্রসারিত করতে শুরু করে। বিভিন্ন কর্মকান্ড ও কথাবার্তায় তার ভালোলাগা, আবেগ, অনুভূতি, রাগ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চারপাশের উপর নির্ভরশীলতা এগুলোর প্রকাশ ঘটায়। এ সময়টাতেই ধীরে ধীরে শিশুর নিজস্বতা এবং ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়। সে তার চারপাশের বাস্তবতার সাথে নিজের কল্পনার একটা সম্পর্ক তৈরি করে। কাজেই, এ সময়ে আপনার সন্তানের মানসিকতা বুঝতে চেষ্টা করুন, তার কল্পনার জগতের সাথে নিজেকেও পরিচিত করান এবং তাতে প্রচ্ছন্ন সায় দিন। এটা তার বিশ্বাস এবং নির্ভরতাকে শক্তিশালী করবে।
প্রি-স্কুল বয়সটাই হল মুগ্ধ হওয়ার বয়স। শিশুরা এ সময়ে চারপাশ দেখে মুগ্ধ হয়। যেমন কোন গাছ, ঘড়ি, গাড়ি, বিমান, অথবা রাতের আকাশের চাঁদ বা বাসায় কোন অতিথি। অপার কৌতুহল নিয়ে সে হয়তো জানতে চাইবে- চাঁদ কেন রাতেই আসে? কিংবা চাঁদ মামাকে একটা ‘হ্যালো’ জানাই?

আপনি খেয়াল করবেন যে, আপনার আদরের সন্তান হয়তো এমন কিছু জগত নিয়ে নিজের কল্পনায় ভাবতে শুরু করবে যেগুলোর আসলে বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই, কোন শুরু বা শেষ নেই কিংবা আপনার কাছে হাস্যকর বা অস্বাভাবিকও লাগতে পারে। এ সময় কোন কোনদিন সে হয়তো আপনার কাছে শিং ওয়ালা বাঘ কিংবা এমন কোন ভূতের গল্প বলবে, যা সে সত্যিই বিশ্বাস করে।
এসব অবাস্তব ভাবনা নিয়ে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। এ ভাবনাগুলো তার মানসিক বিকাশ এবং সৃজনশীল কল্পনাকে সমৃদ্ধ করবে।

তবে, আপনার সন্তান যদি এমন কোন আচরণ বা বিষয় নিয়ে আতংকিত হয় বা ভয় পায়, তবে তার এ ভয় নিয়ে মজা না করে বরং আপনি তার ভরসার জায়গা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করুন।

সন্তানের বন্ধুদের গল্প শুনুনঃ
ধীরে ধীরে আপনার প্রি-স্কুলার সন্তান হয়তো আপনাকে তার কোন বন্ধু সম্পর্কে আগ্রহ নিয়ে বলতে শুরু করবে। এক্ষেত্রে তার সেই বন্ধুদের কেউ কেউ হয়তো আপনার পোষা প্রাণী বা তার কোন খেলনা পুতুল বা গাড়িও হতে পারে। এই যে প্রাণী বা খেলনাকে কল্পনায় বন্ধু বানানো, এটাও শিশুর মানসিক বিকাশের একটা মাধ্যম। এমনকি এ মাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে সৃজনশীলও হয়ে ওঠে। কেননা, এর ফলে সে তার বন্ধুর সাথে গল্প করে, আবেগ-অনুভূতি এবং আচরণ প্রকাশ করে কিংবা নিজের মত করে খেলাধূলা করে।

সন্তানের এ কর্মকান্ডগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখুন। ধরুন, তাকে হয়তো কোনদিন বলবেন- খেলার পুতুলসহ তাদের স্কুলে পাঠাবেন। এটা তার মানসিক অবস্থানকে স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করবে।

সন্তানের সৃজনশীলতায় প্রশংসা করুন এবং মতামতকে গুরুত্ব দিনঃ
আপনার সন্তানকে জানতে দিন যে, তার ভাবনা এবং সৃজনশীলতার কারনে আপনি তাকে নিয়ে গর্ব করেন। তার কথা শুনুন, তার সাথে কথা বলুন এবং যে কোন বিষয়ে তাকে পছন্দ করার সুযোগ দিন। সে কি চায়, কোনটা খেতে চায় বা কোন গেইমটা দুজন মিলে খেলতে পারেন; এমন সবকিছুতেই তার মতামত শুনুন এবং তাকে সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহ দিন। এভাবে তার মতামতকে প্রাধান্য দিন এবং তাকে বুঝতে দিন যে, আপনার কাছে তার মতামতের গুরত্ব রয়েছে।

একই সাথে এটাও বুঝতে দিন যে, তার মূল সিদ্ধান্ত বা পরামর্শ দেয়ার জন্য আপনি সাথে আছেন।

খেলনা হোক সৃজনশীলঃ
বাচ্চারা গেইম খেলতে পছন্দ করে। এক্ষেত্রে আপনি চেষ্টা করুন তার সাথে মিলে এমন গেইম পছন্দ করা, যা দুজনেই খেলতে পারেন। অনেকে আবার বাচ্চাদের গেইম খেলতে দিতে চান না কিংবা হয়তো গেইম খেলতে দেয়ার মত পর্যাপ্ত উপকরণ নেই। সেক্ষেত্রে আপনি তাকে পেপার কাটিং, ক্রাফটিং বা ড্রয়িং এ আগ্রহী করে তুলতে পারেন।
এ সময় তাকে যে খেলনাগুলো দেবেন, সেগুলো যেনো আবিষ্কারধর্মী, নাটকীয় ও সৃজনশীল হয়, এ বিষয়ে সচেতন থাকুন।

শারীরিক গঠন সম্পর্কে সচেতন করুনঃ
চার বা পাঁচ বছর বয়সের দিকে সন্তানেরা ধীরে ধীরে শারীরিক গঠন সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ সময় আপনার সন্তান হয়তো বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কৌতুহল থেকে বা সন্তান কি করে পৃথিবীতে আসে এ ধরনের জিজ্ঞাসা থেকে প্রশ্ন করতে পারে। এক্ষেত্রে তাকে কৌশলে উত্তর দিতে পারেন। এছাড়াও যৌনতা বা নগ্নতার বিষয়গুলো যে সবার সম্মূখে আলোচনার বিষয় নয়, ধীরে ধীরে এ সম্পর্কে সচেতন করে তুলুন।
পারিবারিক শিক্ষা থেকেই শিশুর প্রকৃত মেধা, মানসিকতা ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ হয়। তাই, আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে সচেতন হোন এবং তার প্রতিটি চিন্তা ও কাজের ক্ষেত্রে নিজেকে বন্ধু ও ভরসার জায়গা হিসেবে সম্পর্ক স্থাপন করুন।
আপনার ও সন্তানের জন্য শুভকামনা।

facebook.com linkedin.com twitter.com
Categories:

Leave a Reply

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে প্রয়োজন যে ৮টি খাবার
প্রতিটি পরিবারে বাচ্চাদের খাবার নিয়ে থাকে বাড়তি সচেতনতা। বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে, বাচ্চার বয়স
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে কোন ৫টি সমস্যা দেখা দেয়?
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে যে ৫টি সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আয়োডিনের ঘাটতির
পরীক্ষার সময় মনোযোগ ধরে রাখতে ও সুস্থ থাকতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার
স্টুডেন্ট লাইফ মানেই প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা। শিক্ষা জীবনে স্টুডেন্টদের পরীক্ষার মাধ্যমেই ধাপে ধাপে এগিয়ে
দৈহিক সুস্থতায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জিংক কেন প্রয়োজন?
সুস্থ থাকতে হলে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ থাকা চাই। সহজভাবে বলতে চাইলে,
don't worry about summer
প্রচন্ড গরমে নিমিষেই দূর হবে সারাদিনের ক্লান্তি
রোদের তাপ ক্রমশ বাড়ছে তাই না? এদিকে এই গরমের দিনে মিসেস শারমিনকে থাকতে হয় সারাদিন
গরমে সুস্থ থাকতে কেমন খাবার খাওয়া চাই?
ইদানীং অনেক গরম পড়েছে তাই না? চারিদিকে গরমের দাবদাহে জীবন প্রায় অতিষ্ঠ। কিন্তু জীবন-জীবীকার খোঁজে আমাদের
কম খরচে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে খাদ্যতালিকা যেমন হওয়া উচিত
বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন? মাছ-মাংসের দাম শুনলেই মনে হয় বাজারে আগুন লেগে আছে। কিন্তু
DHA এবং ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট
ডোকোসাহেক্সনিক এসিড বা সংক্ষেপে DHA হলো মস্তিষ্ক গঠনের একদম প্রাথমিক উপাদান। সহজ করে বললে DHA
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন কেন জরুরি ?
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভস্থ সন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিতে মায়ের চাই বাড়তি যত্ন ও সব রকমের পুষ্টি
বুদ্ধিতে বৃদ্ধিতে সন্তানের চাই সঠিক পুষ্টি
পুষ্টি ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বাড়ন্ত শিশুর জন্য খুব জরুরি। কেননা জন্মের পর প্রথ এই কয়েক