পুষ্টিতে আর মনের তুষ্টিতে ভালো থাকুক মেয়েরা বয়ঃসন্ধি তে

একজন মানুষ জন্মের পর থেকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক ধাপ অতিক্রম করে। বয়ঃসন্ধিকাল প্রত্যেকের জীবনে এমনই একটি ধাপ। বয়ঃসন্ধি কাল হলো এমন এক সময় যখন একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় শারীরিক পরিবর্তনের মাধ্যমে শিশুর শরীর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে রূপান্তরিত হয়। এটি মূলত শৈশব ও যৌবনের মধ্যবর্তী অবস্থা। সাধারণত ১০-১৫ বছর বয়সের এই সময়কেই বয়ঃসন্ধিকাল বলে। এই সময় মেয়ে এবং ছেলে উভয়ের শরীর এবং মনের নানা ধরণের পরিবর্তন ঘটে। শরীরের এই পরিবর্তনের সাথে তাদের মানসিক ও সামাজিকভাবে খাপ খাওয়াতে হয়। এই পুরো সময়কালে তাই ছেলে মেয়ে উভয়েরই প্রয়োজন হয় একটু বেশি যত্ন এবং মনোযোগের।

সাধারণত মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল ছেলেদের আগে শুরু হয়। এই সময় মেয়েরা বিভিন্ন রকম শারীরিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যায় এবং এই সময়েই মেয়েদের Menstruation বা ঋতুস্রাব (মাসিক) হয়। একটি কিশোরীর জন্য এটি একটি সংকেত যা থেকে বোঝা যায় সে বাড়ন্ত কৈশোরে পা ফেলেছে। এ প্রক্রিয়ায় একজন নারীর দেহ বয়সের সাথে ধিরে ধিরে সন্তান ধারনের জন্য প্রস্তুত ও উপযোগী হয়।

ঋতুস্রাবের সময় মেয়েদের কিছু প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। এই সময় মেয়েদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নিজের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী স্যানিটারি ন্যাপকিন, ট্যাম্পন, ম্যান্সট্রুয়াল কাপ কিংবা পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করতে হবে। কাপড় ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা নিয়মিত পরিষ্কার করে কড়া রোদে শুকাতে দিতে হবে যাতে রোদের তাপে জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। স্যানিটারি ন্যাপকিন ৮ ঘন্টা অন্তর এবং ট্যাম্পন ব্যবহার করলে প্রতি ২ ঘণ্টা অন্তর তা পরিবর্তন করতে হবে।

ঋতুস্রাবের সময় মেয়দের হরমোনের কারণে কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে৷ এই সময় মেয়েদের শরীর অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশি দুর্বল থাকে। অনেকের জরায়ু নিচের দিকে নেমে আসে, তলপেট স্ফীত হয় এবং ব্যথাও করে। এরকম হলে গরম পানির ব্যাগ কিংবা বোতলে গরম পানি ভরে পেটের উপর দিয়ে রাখলে আরাম পাওয়া যায়। হরমোনের পরিবর্তনের জন্য মানসিক অবসাদ এবং মুড সুইং হয়ে থাকে। এসব সমস্যা যাতে বড় কোন অসুবিধার সৃষ্টি না করে তাই  প্রয়োজন অতিরিক্ত যত্ন।

ঋতুস্রাবের সময় এমন খাবার খেতে হবে যা শরীরের ক্ষয় পূরণ ও বৃদ্ধি করবে,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এবং শরীরের তাপ ও শক্তি উৎপাদন করবে। চলুন জেনে নিই, এ সময় কী ধরণের খাবার খাওয়া উচিত এবং সেগুলো কোথায় পাবোবয়ঃসন্ধি

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার

পিরিয়ডের সময় আয়রন-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া খুব জরুরি।  আয়রনের ঘাটতির কারণে শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেসব খাবারে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায় যেমন মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, কচু শাক, পুঁই শাক, ডাঁটা শাক, ফুলকপির পাতা, ছোলা শাক, ধনে পাতা, তরমুজ, কালো জাম, খেজুর, পাকা তেঁতুল ও আমড়া নিয়মিত খাবার চেষ্টা করতে হবে। এই খাবারগুলো শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করবে।দুপুরবেলা শাকের সাথে এক টুকরো লেবু খেলে আয়রন বেশি শোষণ হয়।

পানি

মাসিকের সময় রক্তপাতের পাশাপাশি শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। আর এই অভাব পূরণ করতে পান করতে হবে প্রচুর পানি। অন্যান্য পানীয়র চাইতে সাধারণ পানিই শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে সব চাইতে বেশি কার্যকর।

বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার

বাদামে নানান রকম ভিটামিন যেমন_ ভিটামিন ই, বি-৬  নায়াসিন,ফলিক এসিড  ও খনিজ উপাদান ক্যালসিয়াম, জিংক,ম্যাগনেসিয়াম,আয়রন সেলেনিয়াম, ফসফরাস রয়েছে যা পিরিয়ডের সময় শরীরের জন্য ভালো। চীনা বাদাম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, পেস্তা, আখরোট ইত্যাদি পিরিয়ডজনিত শরীরের ঘাটতি পূরণে বেশ উপকারী। সাথে কুমড়ার বীজ সহ নানা ধরণের বীজ রাখতে পারেন খাবারের তালিকায়।

মাছ

মাছে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি। এগুলো পিরিয়ড চলাকালীন শরীরের ক্ষয় পূরণ করে এবং ব্যথা কমাতেও ভূমিকা পালন করে।

ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার

এক গ্লাস গরম দুধ এ সময় আরাম দেবে। Internal Medicine অনুযায়ী ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি পিএমএস এর লক্ষণ হ্রাস করে থাকে। এমনকি এই খাবারগুলো পেশী ব্যথা, পেট ব্যথা দূর করে দেয়। দুধ, দুধ জাতীয় খাবার, ডিম এই সময় খাওয়া উচিত।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল

ঋতুস্রাবের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি খাওয়া প্রয়োজন। শরীরে আয়রনের ঠিকমত শোষণ ও যথাযথ কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন সি জরুরি। কিছু সহজ লভ্য ফল যেমনঃ পেয়ারা, আমড়া, আমলকি, লেবু, জলপাই, জাম্বুরা, পাকা টমেটো, কামরাঙা, পাকা পেঁপে, আনারস ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

সবুজ শাক সবজি

সবুজ শাক সব্জিতে আছে প্রচুর আয়রন, যা শরীরের ক্ষয় পূরণে সহায়তা করবে। সেই সাথে উচ্চমাত্রায় আঁশও আছে এতে যেটি কিনা হজমে সহায়তা করে। ভালোমতো হজম হওয়া পিরিয়ডের সময় সুস্থ থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

খাদ্য ভীতিঃআজকাল দেখা যায় এই বয়সে বাচ্চারা ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক বেশি কম খাবার  গ্রহণ করে থাকে। আবার ফাস্টফুড ,  জাংক ফুড বেশি খাওয়ার কারণে এবং শাকসবজি কম খাওয়ার কারণে শরীরে নানা রকম ভিটামিন ও মিনারেল এর ঘাটতি দেখা যায়। তাই এই সময় সবগুলো ফুট গ্রুপ থেকে বিভিন্ন রকম খাবার খাওয়া অনেক জরুরি।

বয়ঃসন্ধিকালে শরীর ও মানসিক পরিবর্তনে সঠিক খাবার এবং যত্নই পারে সুস্থ ভবিষ্যৎ তৈরি করতে।

তাই এসময় সঠিক খাবার নির্বাচন ও পর্যাপ্ত খাবার খাবার খাওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

facebook.com linkedin.com twitter.com
Categories:

Leave a Reply

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে প্রয়োজন যে ৮টি খাবার
প্রতিটি পরিবারে বাচ্চাদের খাবার নিয়ে থাকে বাড়তি সচেতনতা। বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে, বাচ্চার বয়স
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে কোন ৫টি সমস্যা দেখা দেয়?
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে যে ৫টি সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আয়োডিনের ঘাটতির
পরীক্ষার সময় মনোযোগ ধরে রাখতে ও সুস্থ থাকতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার
স্টুডেন্ট লাইফ মানেই প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা। শিক্ষা জীবনে স্টুডেন্টদের পরীক্ষার মাধ্যমেই ধাপে ধাপে এগিয়ে
দৈহিক সুস্থতায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জিংক কেন প্রয়োজন?
সুস্থ থাকতে হলে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ থাকা চাই। সহজভাবে বলতে চাইলে,
don't worry about summer
প্রচন্ড গরমে নিমিষেই দূর হবে সারাদিনের ক্লান্তি
রোদের তাপ ক্রমশ বাড়ছে তাই না? এদিকে এই গরমের দিনে মিসেস শারমিনকে থাকতে হয় সারাদিন
গরমে সুস্থ থাকতে কেমন খাবার খাওয়া চাই?
ইদানীং অনেক গরম পড়েছে তাই না? চারিদিকে গরমের দাবদাহে জীবন প্রায় অতিষ্ঠ। কিন্তু জীবন-জীবীকার খোঁজে আমাদের
কম খরচে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে খাদ্যতালিকা যেমন হওয়া উচিত
বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন? মাছ-মাংসের দাম শুনলেই মনে হয় বাজারে আগুন লেগে আছে। কিন্তু
DHA এবং ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট
ডোকোসাহেক্সনিক এসিড বা সংক্ষেপে DHA হলো মস্তিষ্ক গঠনের একদম প্রাথমিক উপাদান। সহজ করে বললে DHA
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন কেন জরুরি ?
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভস্থ সন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিতে মায়ের চাই বাড়তি যত্ন ও সব রকমের পুষ্টি
বুদ্ধিতে বৃদ্ধিতে সন্তানের চাই সঠিক পুষ্টি
পুষ্টি ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বাড়ন্ত শিশুর জন্য খুব জরুরি। কেননা জন্মের পর প্রথ এই কয়েক