ওবিসিটি বা স্থূলতা শিশুদের একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা। অথচ, আমাদের দেশের অধিকাংশ মায়েরা এ সম্পর্কে সচেতন না। সম্প্রতি জামালপুরে মায়েদের উপর এক গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, মায়েদের ধারণা অনুসারে ৩% শিশুর ওবিসিটি বা স্থূলতার সমস্যা আছে, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে ১৪% শিশু সেখানে ওবিসিটি বা স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে। এটি যে শুধু জামালপুরের দৃশ্য তা কিন্তু না। আমাদের দেশের অধিকাংশ মায়ের ওবিসিটি বা স্থূলতা সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই।
ওবিসিটি বা স্থূলতা কী?
ওবিসিটি বা স্থূলতা বলতে, স্বাভাবিকের চেয়ে ওজন বেশি বেড়ে যাওয়া কিংবা শরীরের মেদবৃদ্ধিকে বোঝায়। বিএমআই বা বডি ম্যাস ইনডেক্স দিয়ে ওবিসিটি নির্ণয় করা হয়। যদি কারো বিএমআই ৩০ এর বেশি হয় বা শিশুর বিএমআই +২ জেড স্কোর এর চেয়ে বেশি হয় তবে সে ওবিসিটি বা স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে। বিএমআই যদি +১ ও +২ জেড স্কোর এর মাঝে থাকে তখন প্রি-ওবিসিটি বা অতিরিক্ত ওজন বলে। এই শিশুগুলো একটু বেশি খেলেই সাথে সাথে ওবিসিটি বা স্থূলতার সমস্যায় ভোগে।
কেন হয় ওবিসিটি?
ছোটবেলায় কম অ্যাক্টিভ থাকলে (কম শারীরিক পরিশ্রম করা বা কম খেলাধুলা করা) এবং অতিরিক্ত ক্যালরির খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করলে ওবিসিটি বা স্থূলতার সমস্যা দেখা দেয়। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীনগত ও হরমোনগত কারণে শিশু স্থূলতার সমস্যায় আক্রান্ত হয়।
ওবিসিটি বা স্থূলতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কী করবেন?
ওবিসিটি বা স্থূলতা এমন একটি সমস্যা, যা কোন সন্তানের একার পক্ষে দূর করা সম্ভব হবে না। এজন্য চাই পুরো পরিবারের সম্পূর্ণ সমর্থন।
সন্তানের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি রোধে সহায়তা করার উপায়:
সন্তানের ওবিসিটি বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা দূর করার জন্য শুরু থেকেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মাধ্যমে এ সমস্যা দূর করে সুস্থ থাকা যায়। সন্তানের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি রোধে সহায়তা করার উপায়গুলো হলো-
পরিবারের সবাই মিলে শিশুর কাছে ভাল উদাহরণ স্থাপন করা:
সকলে মিলে স্বাস্থ্যকর খাওয়া এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে প্রত্যেকে যেমন উপকৃত হবে, তেমনি আপনার সন্তানের সুস্থ অভ্যাস গড়ে উঠবে; যা তার ওবিসিটি বা স্থূলতার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করবে।
শিশুকে স্বাস্থ্যকর নাস্তা খেতে দেয়া:
শিশুর নাস্তার তালিকায় পরিবর্তন আনুন। তাকে প্রতিদিনের রেগুলার নাস্তার পরিবর্তে কম ফ্যাটযুক্ত দই, গাজর বা কম ফ্যাটযুক্ত দুধ, সিরিয়াল ইত্যাদি খাবার দিন। এতে শিশু অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির হাত থেকে মুক্তি পাবে।
নতুন কোনও খাবার ট্রাই করলে শিশুকে একাধিকবার খেতে দিন:
আপনার সন্তান প্রথমবারেই নতুন খাবার পছন্দ করবে- তা কিন্তু না। ধীরে ধীরে তাকে নতুন খাবারের সাথে পরিচিত করুন। এতে তার সেই খাবারের প্রতি গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং সঠিক অভ্যাস তৈরি হবে।
শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন:
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে ঘুম পর্যাপ্ত না হলে ওবিসিটি বা স্থূলতার সমস্যা দেখা দেয়। তাই, শিশুকে সুস্থ রাখতে তার স্বাভাবিক ঘুমের পরিমাণ নিশ্চিত করুন।
এছাড়া শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে তাকে শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি খেতে দিন। শিশুকে উচ্চ ফ্যাট সমৃদ্ধ মাংসের পরিবর্তে মুরগীর মাংস, সি-ফুড, ডিম ইত্যাদি খেতে দিন।
পরিশেষে, আপনার শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে আপনাকেই। যদি অল্প বয়সে নিশ্চিত হয় শিশুর সুস্থ অভ্যাস, তবে নিশ্চিত হবে তার সুস্থ ভবিষ্যৎ।