নতুন দশকে পা দিতেই পুরো বিশ্ব আটকে পড়েছে করোনার কবলে। কোন ধরণের ওষুধ বা টিকা না থাকা এই রোগের প্রকোপ কমানোর একমাত্র উপায় হলো সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং, অর্থাৎ অন্যের সংস্পর্শ এড়িয়ে ঘরে বসে ফিট থাকা। এই সামাজিক দুরত্বের পাল্লায় পড়ে দৈনন্দিন জীবনের রুটিন থেকেও আমরা প্রায় সবাই দূরে সরে এসেছি। খাওয়া, ঘুম থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুতেই চলে এসেছে অনিয়ম। আর সেই অনিয়মের প্রভাব পড়ছে আমাদের দেহে।
ঘরে থাকা ছাড়া এখন কোন উপায় না থাকলেও, অনিয়মের চক্রে পড়ে শরীরের অযত্ন করা চলবে না। একটানা শুয়ে বসে থাকা, অসময়ে খাওয়া-ঘুম ইত্যাদি কারণে দেহের ফিটনেস ঠিক থাকে না। এতে করে জীবনযাত্রা অসহনীয় তো হয়ই, পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। সুস্থতার জন্য তাই ঘরে বসেই দেহকে ফিট রাখার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। সুসময়ের অপেক্ষায় ঘরে বসে থাকা দিনগুলিতে যেন শরীরে অন্য কোন রোগ বাসা বাধতে না পারে, তার জন্য দরকার কিছু নিয়ম মেনে চলা।
একটানা শুয়ে-বসে থাকবেন না:
ফোন, মনিটর বা টিভির স্ক্রিনের দিকে মনোযোগ থাকলে সময়ের হিসাব ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু একটানা বসে থাকার ফলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই প্রতি ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পর ছোটখাটো ব্রেক নিন। এই সময়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিতে পারেন একটু পায়চারী করতে পারেন, কিংবা নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে পাশের রুম অথবা বারান্দা থেকে ঘুরেও আসতে পারেন! এছাড়া মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যা করছিলেন তাই করতে পারেন। একঘেয়েমিও কাটবে, শরীরও থাকবে সচল।
হাঁটাহাঁটি করুন নিয়মিত:
বাইরে যাওয়া বন্ধ হওয়ার ফলে হাঁটাহাঁটির অভ্যাসেও আমাদের বিরতি পড়েছে। হাঁটা শরীরের জন্য বেশ উপকারী ব্যায়াম। এতে করে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি তো কমেই, সাথে শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং বিভিন্ন ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে এই সময়ে বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম বলে হাঁটাহাঁটির বিকল্প পন্থা অবলম্বন করতে হবে।
ছাদে যাওয়ার সুযোগ থাকলে সুবিধামতো সময়ে ঘড়ি ধরে টানা হাঁটতে পারেন, তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে। কিন্তু অনেক বাসায় সে সুযোগ থাকে না। সেক্ষেত্রে বারান্দা যথেষ্ট প্রশস্ত হলে সেখানেই পায়াচারী সেরে নিতে পারেন। সেটিও সম্ভব না হলে ঘরের মধ্যে অন্তত বিশ কদম নির্বিঘ্নে হাঁটা যায় এমন যায়গা বের করুন। সেখানে এক মাথা থেকে অন্য মাথায় হেঁটে নিন। দিনে ৩০ মিনিট হাঁটলে দেহ সতেজ থাকবে, মন থাকবে চনমনে।
সিঁড়িতে ঘাম ঝরান:
সিঁড়িতে ওঠানামা বেশ কার্যকর একটি ব্যায়াম। দ্রুতবেগে ২০ সেকেন্ড করে সিঁড়িতে ওঠানামা করলে মাত্র ছয় সপ্তাহেই দেহের ফিটনেসের বেশ উন্নতি হয়। সুবিধামতো সময় বেছে সিঁড়িতে কার্ডিও সেরে নিলে ক্যালোরি পুড়িয়ে মেদ ঝরানোর কাজও হবে বেশ ভালোভাবেই।
শরীরের ওজন ব্যবহার করেই ওজন কমান:
স্ট্রেংথ ট্রেনিং করতে ভারী ওজনের ডাম্বেল কিংবা জিমের সরঞ্জাম লাগবে, এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। নিজের শরীরকে ব্যবহার করে ‘ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ’ ফিটনেস ধরে রাখার জন্য কার্যকর উপায়। পুশআপ, স্কোয়াট থেকে শুরু করে আরো অনেক উপায়ে ঘরে বসেই শরীরচর্চা করতে পারেন। ইউটিউব বা বিভিন্ন ব্লগ ঘেঁটে আপনার পছন্দমতো কিছু ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন। চেষ্টা করবেন সপ্তাহে অন্তত দুই দিন এভাবে শরীরচর্চা করার। ৮-১৫ রকমের ব্যায়াম নিয়ে একটি রুটিন করে ফেলুন, সেগুলো কমপক্ষে দুইবার করে করতে পারেন।
স্ট্রেংথ ট্রেনিং করলে কয়েক সপ্তাহের মাঝেই আপনার শরীরের মাঝে পরিবর্তন দেখতে পারবেন। ওজন হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে আপনার পেশিও সুগঠিত হতে শুরু করবে। দৈনন্দিন কাজে এনার্জিও পাবেন বেশি।
যোগব্যায়াম সুস্থ রাখবে দেহ ও মন:
পৃথিবীর এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে মন থেকে নেতিবাচক ভাবনা দূরে রাখা খুব একটা সহজ নয়। বর্তমান পরিস্থিতি ও আসন্ন সময়ে কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা সবারই। কিন্তু যা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, তা নিয়ে ভেবে মন ও শরীরের সুস্থ্যতা নষ্ট করা উচিৎ নয়। এই সময়ে চারপাশের নেতিবাচক ভাবনাকে দূরে রাখতে যোগব্যায়ামের সাহায্য নিতে পারেন। নিয়মিত যোগব্যায়ামের মাধ্যমে দেহ ও মনের সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে করে শরীর সক্রিয় হবে, চিন্তাধারাও হবে নির্মল ও ইতিবাচক।
লজ্জা পাবেন না, নাচুন:
নৃত্য এমন এক আর্ট, যেখানে সৃষ্টিশীলতার পাশাপাশি খরচ হয় প্রচুর ক্যালোরি। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এই অজুহাত আপনি নিজ ঘরে দিতে পারবেন না। পছন্দের গানের সাথে তাল মিলিয়ে হাত পা ঝেড়ে নাচাও শরীরচর্চার একটি বেশ ভালো উপায়। এতে শরীরের উপকারের পাশাপাশি মনও উৎফুল্ল হবে।
শিশুদের খেলায় অংশ নিন:
নানা ব্যস্ততায় পরিবারের শিশুদের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ না পেলেও, এখন সহজেই সেটি করতে পারেন। শিশুদের স্মার্টফোনে আসক্তি দূর করতে তাদেরকে সময় দিতে হবে, তাদের সাথে অংশ নিতে হবে বিভিন্ন খেলাধুলায়। চার দেয়ালের ভেতরেই ঘরের ক্ষুদে সদস্যদের সাথে বিভিন্ন খেলায় অংশ নিলে ঘরের বিভিন্ন প্রান্তে ছোটাছুটি করতেই হবে। এতে না চাইতেই দেখবেন, ঘাম ঝরা শুরু হয়েছে। এভাবে আনন্দমুখরভাবে সময় কাটিয়ে নিজের শরীরের প্রতিও উপকার করা হবে।
অলস সময় কাটালে শরীর ও মন দুটিই দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই এই সময়টিতে নিজেকে বিভিন্নভাবে ব্যস্ত রাখুন, ও নিরাপদে থাকুন।