গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসিত ৩টি প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্ন: গর্ভস্থ শিশুর জন্য মায়ের কী কী খাবার খাওয়া উচিত?

প্রত্যেক নারীর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অভিজ্ঞতা হলো ‘মা’ হওয়া। জন্মের সময় আমরা সবাই আমাদের শিশুর সুস্থতা কামনা করি। শিশুর এই সুস্থতা নিশ্চিত হয় গর্ভাবস্থায় মায়ের যত্ন ও সঠিক পুষ্টি যোগানের মাধ্যমে। আর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে চাই নির্দিষ্ট সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ।

সাধারণত গর্ভকালীন সময়কে ৩টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়ে থাকে।

*ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার

*সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার

*থার্ড ট্রাইমেস্টার

ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার:

এসময়ে সাধারণ খাবারের পাশাপাশি র‍্যাপিড সেল অর্গান ডেভেলপমেন্ট-এর জন্য যেসব উপাদান বেশি প্রয়োজন তা হলো:-

*প্রোটিন- প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন যেমন, বিভিন্ন রকম ডাল, বাদাম ইত্যাদি।

*ফলিক অ্যাসিড- পালং শাক, লেটুস, ব্রকলি, কলিজা, ডাল, লাল চালের ভাত, দুধ, ডিম, ফর্টিফাইড সিরিয়াল ইত্যাদি।

*ভিটামিন B12– মাছ, মাংস, কলিজা, দুধ, ডিম এবং পনীর।

*জিংক- রেড মিট, লাল আটা, লাল চালের ভাত, লাল চিড়া, ডাল, দানা জাতীয় খাবার ইত্যাদি।

*আয়রন- মাংস, কলিজা, মাছ, বিট, বেদানা, সফেদা ফল, কচু শাক, পালং শাক, লাল শাক, ইত্যাদি। এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে আয়রন গ্রহণের জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।

*ভিটামিন সি- প্রতিদিন ১টি করে ভিটামিন সি জাতীয় ফল যেমন পেয়ারা, আমলকী, কমলা, মাল্টা, এবং লেবু ইত্যাদি।

সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার:

এসময়ে উপরে উল্লেখিত পুষ্টি উপাদানগুলোর পাশাপাশি আরও খেতে হবে-

*ক্যালসিয়াম: দুধ ও দুধের তৈরি খাবার, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, বাদাম।

*ভিটামিন এ: ডিম; সবুজ, লাল, হলুদ- শাকসবজি যেমন: মিষ্টি কুমড়া, গাজর, আম, কাঁঠাল, পালং শাক ইত্যাদি।

*ম্যাগনেসিয়াম: সবুজ শাকসবজি, শিমের বিচি, বাদাম, অপরিশোধিত সিরিয়াল।

*ভিটামিন বি: বিভিন্ন শস্য জাতীয় খাদ্য, সবুজ শাক, বাদাম, দুধ, মাছ, ফুলকপি, ডিম, বরবটি, ঢেঁকি শাক ও চাল।

থার্ড ট্রাইমেস্টার:

গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য যে উপাদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হল –

*ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: শীতল পানির চর্বিযুক্ত মাছ যেমন- স্যামন, টুনা, সার্ডিন; আখরোট, তিসি তেল, সয়াবিন তেল, চিংড়ি, শিম।

প্রশ্ন: কোষ্ঠকাঠিন্য (কষা পায়খানা) ও ডায়রিয়া হলে করনীয় কী?

গর্ভাবস্থায় অনেকেরই কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া হয়ে থাকে। তবে, প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে শাকসবজি খেলে এবং পর্যাপ্ত পানি পান করলে এই সমস্যা কমে আসে।

ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে, যদি দিনে ৩-৪ বার পাতলা পায়খানা হয় তাহলে বেশি করে স্যালাইন, কাঁচা কলা, পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে। তবে ৪-৫ বারের বেশি পাতলা পায়খানা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রশ্ন: খাবার গন্ধ লাগে এবং খেতে ইচ্ছে করে না- এই সমস্যার সমাধান কী?

যেসব খাবারে গন্ধ লাগে তা সরাসরি না খেয়ে অন্যভাবে খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। যেমন: দুধের পরিবর্তে দই, ছানা ইত্যাদি খেতে পারেন। মাছের পরিবর্তে ফিস ফিঙ্গার খেতে পারেন। আবার, সস দিয়ে অথবা তেঁতুল দিয়ে মাছ রান্না করেও খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় যেহেতু খেতে ইচ্ছা করে না তাই উচ্চ ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। যেমন: মিল্ক শেক, ফলের রস, বাদাম ও কলা দিয়ে দুধ কিংবা আপেল স্মুদি ও কিসমিস দিয়ে দুধ।

facebook.com linkedin.com twitter.com
Categories:

Leave a Reply

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে প্রয়োজন যে ৮টি খাবার
প্রতিটি পরিবারে বাচ্চাদের খাবার নিয়ে থাকে বাড়তি সচেতনতা। বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে, বাচ্চার বয়স
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে কোন ৫টি সমস্যা দেখা দেয়?
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে যে ৫টি সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আয়োডিনের ঘাটতির
পরীক্ষার সময় মনোযোগ ধরে রাখতে ও সুস্থ থাকতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার
স্টুডেন্ট লাইফ মানেই প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা। শিক্ষা জীবনে স্টুডেন্টদের পরীক্ষার মাধ্যমেই ধাপে ধাপে এগিয়ে
দৈহিক সুস্থতায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জিংক কেন প্রয়োজন?
সুস্থ থাকতে হলে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ থাকা চাই। সহজভাবে বলতে চাইলে,
don't worry about summer
প্রচন্ড গরমে নিমিষেই দূর হবে সারাদিনের ক্লান্তি
রোদের তাপ ক্রমশ বাড়ছে তাই না? এদিকে এই গরমের দিনে মিসেস শারমিনকে থাকতে হয় সারাদিন
গরমে সুস্থ থাকতে কেমন খাবার খাওয়া চাই?
ইদানীং অনেক গরম পড়েছে তাই না? চারিদিকে গরমের দাবদাহে জীবন প্রায় অতিষ্ঠ। কিন্তু জীবন-জীবীকার খোঁজে আমাদের
কম খরচে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে খাদ্যতালিকা যেমন হওয়া উচিত
বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন? মাছ-মাংসের দাম শুনলেই মনে হয় বাজারে আগুন লেগে আছে। কিন্তু
DHA এবং ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট
ডোকোসাহেক্সনিক এসিড বা সংক্ষেপে DHA হলো মস্তিষ্ক গঠনের একদম প্রাথমিক উপাদান। সহজ করে বললে DHA
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন কেন জরুরি ?
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভস্থ সন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিতে মায়ের চাই বাড়তি যত্ন ও সব রকমের পুষ্টি
বুদ্ধিতে বৃদ্ধিতে সন্তানের চাই সঠিক পুষ্টি
পুষ্টি ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বাড়ন্ত শিশুর জন্য খুব জরুরি। কেননা জন্মের পর প্রথ এই কয়েক