গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় খাবার

গর্ভবতী মহিলার খাবার নিয়ে নানা ধরণের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকে মনে করেন গর্ভাবস্থায় অনেক বেশি খেতে হবে আবার অনেকে বলে থাকেন এ সময় বেশি খেলে বাচ্চা বড় হবে সেক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি সম্ভন হবে না। হবু মায়েদের খাবার নিয়ে চলে নানা ধরণের কুসংস্কার! আসুন জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার কী কী খাবার অবশ্যই খেতে হবে-

পানি
রোজ প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। পানির সঙ্গে বিভিন্ন সুপ, টাটকা ফলের রসও খেতে হবে। তবে অশ্যই মায়ের ব্লাড প্রেশার মনিটর করতে হবে।

কার্বোহাইড্রেট
কার্বোহাইড্রেট শরীরে শক্তি যোগায়। কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায় ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি, আলু, চিনি, ফল, মাটির নিচের সবজি, মিষ্টি ও গুড় থেকে। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলতে হবে। পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিয়ে খাবারের তালিকায় কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। গর্ভের শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য কার্বোহাইড্রেটের অপেক্ষা প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেল বেশি জরুরি।

প্রোটিন
প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে দৈনিক ১.৫-২ গ্রাম/ প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য। এই পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায় মাঝারি আকারে তিন টুকরা মাংস, দুইটি ডিম, দুই গ্লাস দুধ অথবা দুধ জাতীয় খাবার থেকে। প্রোটিন আসতে পারে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, বাদাম, শিমের বিচি থেকে। চাল ও বিভিন্ন প্রকার ডালের সমন্বয়ে তৈরি খিচুড়ি প্রোটিনের একটি ভালো উৎস।

ফ্যাট বা চর্বি
চর্বিজাতীয় খাবার শক্তির ভালো উৎস। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় হরমোন তৈরিতে এবং কিছু ভিটামিন খাদ্যনালী থেকে শোষণের জন্য ফ্যাট অপরিহার্য। আর এসব ভিটামিন স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক গঠন নিশ্চিত করে। চর্বির ভালো উৎস হচ্ছে ঘি, মাখন, তেল, মাংসের চর্বি। গর্ভাবস্থায় ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৬ যুক্ত খাবার যেমন- সামুদ্রিক মাছের তেল, কাঠবাদাম অত্যান্ত জরুরি মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য।

ফলিক এসিড
গর্ভবতী মায়ের শরীরে দৈনিক ০.৪ গ্রাম ফলিক এসিড প্রয়োজন থাকে। লেটুস পাতা, পালং শাক, কমলা ফলিক এসিডের দারুন উৎস। ডিম, অঙ্কুরিত ছোলা, ব্রকলি, বিট, গরুর কলিজা, বাদাম, পেঁপে, কলা, ফলিক এসিড শিশুর ব্রেন ও স্পাইনাল কর্ড গঠনে এবং রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।

আয়রণ
আয়রন শরীরের রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে। আয়রনের চাহিদা মেটাতে মাকে রোজ পর্যাপ্ত আয়রন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ডিমের কুসুম, ডাল, কলিজা, মিষ্টি কুমড়া, মাছ, মাংস, পালং শাক থেকে আয়রনের চাহিদা পূরণ হতে পারে।

ক্যালসিয়াম
গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে খাবারে ক্যালসিয়াম বেশি আছে এমন খাদ্য বাড়াতে হবে। দুধ ও দুগ্ধজাত সামগ্রী, ছোট মাছ ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। গর্ভকালীন সময়ে একজন মহিলার দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। দৈনিক অন্তত ২ গ্লাস দুধ অথবা দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে।

ভিটামিন
এই সময় বেশি বেশি করে ভিটামিন প্রয়োজন। বিশেষ করে ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স ,ভিটামিন ডি,ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি যুক্ত খাবার অবশ্যই খেতে হবে। সবুজ শাকসবজি আর রঙিন ফলমূল এসব ভিটামিন এ, বি ও সি এর ভাল উৎস। এছাড়া দুধ, ডিম, কলিজা তে প্রচুর ভিটামিন ডি ও কে থাকে। দৈনিক ১৫-২০ মিনিট থাকতে হবে সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি-এর অভাব পূরণ করতে।
একজন গর্ভবতী মাকে অবশ্যই এই খাবারগুলো খেতে হবে তবেই একটি সুস্থ শিশুর জন্ম হবে।

facebook.com linkedin.com twitter.com
Categories:

Leave a Reply

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে প্রয়োজন যে ৮টি খাবার
প্রতিটি পরিবারে বাচ্চাদের খাবার নিয়ে থাকে বাড়তি সচেতনতা। বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে, বাচ্চার বয়স
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে কোন ৫টি সমস্যা দেখা দেয়?
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে যে ৫টি সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আয়োডিনের ঘাটতির
পরীক্ষার সময় মনোযোগ ধরে রাখতে ও সুস্থ থাকতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার
স্টুডেন্ট লাইফ মানেই প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা। শিক্ষা জীবনে স্টুডেন্টদের পরীক্ষার মাধ্যমেই ধাপে ধাপে এগিয়ে
দৈহিক সুস্থতায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জিংক কেন প্রয়োজন?
সুস্থ থাকতে হলে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ থাকা চাই। সহজভাবে বলতে চাইলে,
don't worry about summer
প্রচন্ড গরমে নিমিষেই দূর হবে সারাদিনের ক্লান্তি
রোদের তাপ ক্রমশ বাড়ছে তাই না? এদিকে এই গরমের দিনে মিসেস শারমিনকে থাকতে হয় সারাদিন
গরমে সুস্থ থাকতে কেমন খাবার খাওয়া চাই?
ইদানীং অনেক গরম পড়েছে তাই না? চারিদিকে গরমের দাবদাহে জীবন প্রায় অতিষ্ঠ। কিন্তু জীবন-জীবীকার খোঁজে আমাদের
কম খরচে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে খাদ্যতালিকা যেমন হওয়া উচিত
বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন? মাছ-মাংসের দাম শুনলেই মনে হয় বাজারে আগুন লেগে আছে। কিন্তু
DHA এবং ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট
ডোকোসাহেক্সনিক এসিড বা সংক্ষেপে DHA হলো মস্তিষ্ক গঠনের একদম প্রাথমিক উপাদান। সহজ করে বললে DHA
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন কেন জরুরি ?
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভস্থ সন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিতে মায়ের চাই বাড়তি যত্ন ও সব রকমের পুষ্টি
বুদ্ধিতে বৃদ্ধিতে সন্তানের চাই সঠিক পুষ্টি
পুষ্টি ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বাড়ন্ত শিশুর জন্য খুব জরুরি। কেননা জন্মের পর প্রথ এই কয়েক