গর্ভাবস্থায় কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?

গর্ভাবস্থায় মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ, যেহেতু বিভিন্ন ধরণের খাদ্য আপনার সন্তানের জন্য হুমকির সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় কী খাবার এড়াতে হবে তাই নিয়ে আজকের লেখা-



১। কাঁচা বা অল্প সিদ্ধ ডিম
গর্ভাবস্থার সময় ডিম খাওয়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হলুদ অংশটি শক্ত না হওয়া পর্যন্ত রান্না করা। ডিম কাঁচা থাকলে নানা ধরণের ব্যাকটেরিয়া আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে এবং আপনার স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। হজমে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২। কাঁচা মাছ- মাংস
যখনই আপনি মাছ- মাংস খাবেন, সেটি যেন সঠিকভাবে রান্না করা হয়। সব ব্যাকটেরিয়ার অপসারণ হওয়া নিশ্চিত করার জন্য লবণ এবং জল দিয়ে সঠিকভাবে মাছ-মাংস ধুয়ে নিন এবং ৩০-৪০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
৩। পাস্তুরাইজ না করা দুগ্ধজাত পণ্য
আপনার সন্তানের যথাযথ বিকাশের জন্য আপনার দৈনিক এবং নিয়মিত ভিত্তিতে দুধ খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা আপনাকে এবং আপনার শিশুকে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি যেমন খনিজ, ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন সরবরাহ করে। কিন্তু আপনি শুধুমাত্র পাস্তুরাইজ করা দুধ খাওয়া নিশ্চিত করুন। পাস্তুরাইজ না করা দুধে প্যাথোজেন থাকতে পারে যা গুরুতর খাদ্য বিষাক্ততার কারণ হতে পারে। সবসময় তাজা এবং প্রায় ৩০ মিনিট ফোটানো দুধ খাওয়া নিশ্চিত করুন। দুধের জীবাণুর বিষক্রিয়া মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
৪। না ধোয়া ফল এবং সবজি
গর্ভাবস্থায় আপনার এবং আপনার সন্তানের জন্য ফল এবং সবজি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু না ধোয়া ফল এবং সবজিগুলোর খোসা শুধু ক্ষতিকারক কীটনাশক ও হার্বিসাইডই থাকতে পারে তাই নয়, সেগুলো টক্সোপ্লাজমা গন্ডি এবং লিস্টেরিয়ার মতো মারাত্মক প্যাথোজেনদেরও বাসস্থান হতে পারে। স্প্রাউট, লেটুস এবং বাঁধাকপির মতো না ধোয়া কাঁচা শাকসবজি বিশেষ করে এই সময় এড়ানো উচিৎ। সবজি ও ফল কমপক্ষে ৩০ মিনিট লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
৫। রেস্টুরেন্টের খাদ্য বা দোকানে–কেনা সালাদ
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার করার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন, কারণ এখানে খাবার তৈরির উপাদানগুলো সম্বন্ধে কেউ নিশ্চিত হতে পারে না। রেস্টুরেন্টগুলোতে বা এমনকি দোকানে পাওয়া সালাদগুলো এড়ানো খুব ভালো। সালাদে ব্যবহৃত ফল এবং সবজি সঠিকভাবে ধোয়া না–ও হতে পারে, অথবা তারা হয়তো অনেক আগে কাটা হয়েছে। এছাড়াও বাইরের খাবারে ব্যবহার হতে পারে প্রিজারভেটিভ, আর্টিফিশিয়াল কালার অথবা মনোসোডিয়াম যা শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর।
৬। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ফলের রস
কাঁচা ফল এবং সবজি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা দূষিত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। আপনি বাড়িতে তৈরি তাজা রস দিয়ে আপনার তৃষ্ণা মেটান যাতে নিশ্চিত হতে পারেন যে রসটি তাজা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে বানানো। বাজার থেকে কিনে জুস খাবেন না। জুস তৈরিতে যে পানি ব্যবহার করা হচ্ছে তা যেন বিশুদ্ধ হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

৭। অত্যধিক ক্যাফেইন
গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েটে ক্যাফিন থাকা ভালো নয়। এতে আপনি দ্রুত ডিহাইড্রেটেড হবেন। তাই ক্যাফেইন এডিয়ে চলুন। এছাড়াও ক্যালসিয়াম এবং আয়রন শোষণে বাধা দেয় ক্যাফেইন।
৮। নাইট্রেট–সমৃদ্ধ খাদ্য
নাইট্রেট এমন একটি রাসায়নিক যা কিছু খাবারে যোগ করে তাদের শেলফ লাইফ বাড়িয়ে দেয়। তবে, এটি গর্ভবতী মহিলাদের অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। যখন নাইট্র্রেট রক্তে হিমোগ্লোবিনের সাথে বিক্রিয়া করে, তখন তারা সংশোধিত প্রোটিন উত্পাদন করে যা আপনার শরীরের প্লাসেন্টায় অক্সিজেন সরবরাহ করার ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করে। উচ্চ পরিমাণে নাইট্রেট ধারণকারী খাবারের মধ্যে রয়েছে ডায়েট সোডা, বেকন, সসেজ এবং কৃত্রিম মিষ্টি।
৯। অত্যধিক চিনি সমৃদ্ধ খাদ্য
আপনি আপনার গর্ভাবস্থায় আইসক্রিম এবং চকোলেট অনেক বার খেতে চাইবেন। তবে, এগুলোতে থাকা উচ্চ চিনির মাত্রা আপনার রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা ভ্রূণকে ক্ষতি করতে পারে। প্রতিদিন কত পরিমানে চিনি খাচ্ছেন তা পরীক্ষা করুন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিনি এড়াতে আপনার যথাসাধ্য চেষ্টা করুন। চিনির পরিবর্তে মধু ব্যবহার করুন।
১০। রাস্তার খাবার
গর্ভাবস্থায় আপনার প্রিয় রাস্তার খাবার এড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করুন। তারা শুধুমাত্র অস্বাস্থ্যকরই নয়, তারা খাদ্য বিষক্রিয়া এবং অন্যান্য পাচক সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।
১১। অত্যধিক ফ্যাটযুক্ত খাবার
অত্যধিক ফ্যাটযুক্ত খাদ্য আপনার রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতেপারে, যা আপনাকে স্থূলতা এবং হৃদরোগের ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে, তাই প্রলোভন প্রতিরোধ করুন। ওমেগা-3, 6, এবং 9 ফ্যাটি অ্যাসিড ধারণকারী খাদ্য গ্রহণ করুন কারণ এটি আপনার শিশুর বিকাশের জন্য উপকারী। এরকম কিছু যেমন খাবারের মধ্যে রয়েছে অ্যাভোকাডো, বাদাম, জলপাই এবং কুমড়ো বীজ। যাইহোক, এই খাবারগুলো অনিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাবেন না এবং সবসময় সংযমের সাথে খান।

১২। মশলাযুক্ত খাবার
হবু মায়েদের মশলাযুক্ত খাবার এড়ানো সবচেয়ে ভালো। গর্ভাবস্থার সময়, বুক জ্বলার সম্ভাবনা অনেক বেশী, এবং মশলাযুক্ত খাবার এটিকে শুধু বাড়িয়ে তুলবে। মশলাযুক্ত খাবার মর্নিং সিনেসও সৃষ্টি করতে পারে। মশলা কম পরিমাণে ব্যবহার করুন এবং যখনই আপনি মশলাযুক্ত খাবার খান, নিশ্চিত করুন যে আপনার বুকজ্বালা প্রতিরোধের জন্য সাথে এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ বা একটি টেবিল–চামচ মধুও খাচ্ছেন। অতিরিক্ত তেল ও মশলাযুক্ত খাবারের পুষ্টিমানও কমে আসে।

facebook.com linkedin.com twitter.com
Categories:

Leave a Reply

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে প্রয়োজন যে ৮টি খাবার
প্রতিটি পরিবারে বাচ্চাদের খাবার নিয়ে থাকে বাড়তি সচেতনতা। বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে, বাচ্চার বয়স
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে কোন ৫টি সমস্যা দেখা দেয়?
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে যে ৫টি সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আয়োডিনের ঘাটতির
পরীক্ষার সময় মনোযোগ ধরে রাখতে ও সুস্থ থাকতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার
স্টুডেন্ট লাইফ মানেই প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা। শিক্ষা জীবনে স্টুডেন্টদের পরীক্ষার মাধ্যমেই ধাপে ধাপে এগিয়ে
দৈহিক সুস্থতায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জিংক কেন প্রয়োজন?
সুস্থ থাকতে হলে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ থাকা চাই। সহজভাবে বলতে চাইলে,
don't worry about summer
প্রচন্ড গরমে নিমিষেই দূর হবে সারাদিনের ক্লান্তি
রোদের তাপ ক্রমশ বাড়ছে তাই না? এদিকে এই গরমের দিনে মিসেস শারমিনকে থাকতে হয় সারাদিন
গরমে সুস্থ থাকতে কেমন খাবার খাওয়া চাই?
ইদানীং অনেক গরম পড়েছে তাই না? চারিদিকে গরমের দাবদাহে জীবন প্রায় অতিষ্ঠ। কিন্তু জীবন-জীবীকার খোঁজে আমাদের
কম খরচে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে খাদ্যতালিকা যেমন হওয়া উচিত
বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন? মাছ-মাংসের দাম শুনলেই মনে হয় বাজারে আগুন লেগে আছে। কিন্তু
DHA এবং ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট
ডোকোসাহেক্সনিক এসিড বা সংক্ষেপে DHA হলো মস্তিষ্ক গঠনের একদম প্রাথমিক উপাদান। সহজ করে বললে DHA
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন কেন জরুরি ?
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভস্থ সন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিতে মায়ের চাই বাড়তি যত্ন ও সব রকমের পুষ্টি
বুদ্ধিতে বৃদ্ধিতে সন্তানের চাই সঠিক পুষ্টি
পুষ্টি ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বাড়ন্ত শিশুর জন্য খুব জরুরি। কেননা জন্মের পর প্রথ এই কয়েক