আপনি কি একজন গর্ভবতী মা? আপনার কি পরবর্তী খাবারের কথা চিন্তা করতেই পেটে ব্যথা শুরু হয়ে যায়? তাহলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনি একা নন। বাচ্চা কনসিভ করার পর মায়ের শরীরে হরমোন অনেক বেশি উঠানামা করে। এর ফলে প্রায়ই বমিবমি ভাবসহ দিনে অন্তত একবার বমি হয়। একারণে মায়েদের আর খেতে ইচ্ছে করে না। রিসার্চ বলে প্রেগন্যান্সিতে বিভিন্ন হরমোনের উঠানামা বিশেষ করে লেবটিন (Lebtin) ও হিউম্যান কোরিওনিক গোনাটোটোপিন (HCG) এর প্রভাবে রুচি কমে যায় এবং বমি বমি ভাব বা বমি হয়। তবে চিন্তার কিছু নেই। এখানে আমরা আপনার জন্য এমন কিছু কার্যকরী উপায় উল্লেখ করছি, যা আপনার ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করবে।
যা খাই ৩ বেলায়, ভাগ করে নিই ৬ বেলায়
ক্ষুধাভাব কমে গেলে তিনবেলার ভারী খাবার দুঃস্বপ্নের মতো লাগে। কিন্তু কনসিভ-এর পর আপনাকে খেতে হচ্ছে আপনার ও বাচ্চার-দু’জনেরই খাবার। সেক্ষেত্রে তিন বেলার ভারী খাবারকে ছয় বেলার ভাগ করে খাওয়া যেতে পারে। তখন আপনার প্রতিবার খাবার পরে আর পেট ভারী লাগবে না, পাশাপাশি আপনি পেয়ে যাবেন শরীরের প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টও।
উচ্চ ক্যালরী এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
যেহেতু এসময় বেশি খাওয়া যায় না, তাই অনেকে একদমই খেতে পারেন না। সেক্ষেত্রে উচ্চ ক্যালরীযুক্ত খাবার এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেতে পারে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন, পিনাট বাটার, ডিম, মাংস, স্টেক, মাছ ইত্যাদি ও উচ্চ ক্যালরী সমৃদ্ধ খাবার যেমন, চিজ, দই, দুধ, স্মুদি ইত্যাদি।
খাই স্বাস্থ্যকর কিন্তু হালকা নাস্তা
নাস্তা সাধারণত আপনার ক্ষুধা কমিয়ে দেয়। তাই আপনি যদি স্বাস্থ্যকর খাবার সারাদিন ধরে খান, তাহলে আপনার পেট যেমন হালকা থাকবে, ক্ষুধাও বাড়বে। অ্যালমনড বা বাদাম আপনার মর্নিং সিকনেস বা সকালের অসুস্থতা ও বমিবমি ভাব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি এতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। তাই হাতের কাছে সবসময় অ্যালমনড রাখা উচিত।
ক্যালরী সমৃদ্ধ পানীয়
যেহেতু এসময় সলিড ফুড খাওয়া সমস্যা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ক্যালরী সমৃদ্ধ পানীয় খাওয়া যেতে পারে। যেমন, মিল্ক শেক, বিভিন্ন ফলের রস, দুধ+কলা+বাদাম এর স্মুদি অথবা দুধ+কিসমিস+আপেল এর স্মুদি ইত্যাদি। এবং অবশ্যই প্রতিদিন লেবুর সরবত পান করুন।
নিজে খাবার নির্বাচন করুন
রিসার্চ বলে, যদি গর্ভবতী মা নিজে ঠিক করেন, তিনি কি খাবেন এবং এটা নিয়ে প্লান করেন, তবে তার খাবার রুচি তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। এজন্য নিজের খাবার নিজে ঠিক করুন এবং ডায়েট প্ল্যান করুন। যদি আপনার পছন্দের খাবার অস্বাস্থ্যকর হয় যেমন ফাস্ট ফুড, তবে আপনি বাসায় নিজে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ফাস্ট ফুড তৈরী করুন। যেমন, অলিভ তেল ব্যবহার করা, মেয়নিজ এর বদলে দই ব্যবহার করা করা, হোলসাম খাবার খাওয়া করা ইত্যাদি ।
অতিরিক্ত ফাইবার এড়িয়ে চলুন
যেসব খাবার খেলে অনেকক্ষণ ক্ষুধা লাগে না যেমন, অতিরিক্ত ফাইবারযুক্ত খাবার (অতিরিক্ত শাক-সবজী, ভাত ইত্যাদি) কম খেয়ে কম ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে পারেন।
শরীরচর্চা
প্রেগন্যান্সির সময় অ্যাকটিভ থাকা খুবই জরুরী। কেননা এটি আপনাকে লেবার ও ডেলিভারির জন্য শারীরিকভাবে প্রস্তুত করে। পাশাপাশি এটি আপনার শরীরের ক্যালরি বার্ন করে আপনার মধ্যে ক্ষুধা-ভাব জাগায়। তাই যদি ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, পর্যাপ্ত শরীরচর্চা করুন। তবে শরীরচর্চা করবার সময় কোন ব্যায়ামগুলো করবেন, কোন গুলো করবেন না- তা নিয়ে আগে পরামর্শ করুন ডাক্তারের সাথে।
ডায়েটে থাকুক আদা
পৃথিবীর সব গর্ভবতী মায়েদের কাছে পেট ঠিক রাখা ও ক্ষুধা বাড়ানোর জন্য আদা অন্যতম জনপ্রিয় একটি খাবার। আদা চিবিয়ে খেলে কিংবা চায়ের সাথে মিশিয়ে খেলে বমিভাব দূর হয়। তাই প্রত্যেক গর্ভবতী মায়েদের মাসিক বাজারের লিস্টে আদা রাখা উচিত।