কীভাবে শিশুর স্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাস গড়ে তুলবেন?

ছোটকাল থেকেই শিশুর স্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার দায়িত্ব বাবা-মা ও পরিবারের। শিশুর ৮ মাস বয়সের পর থেকেই শিশুকে খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। তা নাহলে পরবর্তীতে শিশু খেতে চায় না। তাই আপনাকে কিছু কৌশন অবলম্বন করতে হবে তবেই আপনার শিশুর স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে। আসুন কিছু টিপস জেনে নেয়া যাক-

১। খাবার নিজে নিজে খাওয়ার অভ্যাসঃ
যখন থেকে শিশু হাত দিয়ে কিছু ধরতে শিখে তখন থেকেই যদি শিশুকে হাতে কিছু খাবার যেমন আপেলের বা পেয়ারার টুকরা বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই দেয়া হয় তবে বাচ্চা হাতে ধরে খাবার খেতে শিখে।
এই সময় এই অভ্যাস তৈরি না করলে পরবর্তীতে শিশু এই দক্ষতাটা ভুলে যায়।

২। খাবারের রুটিন ঠিক করুনঃ
শিশুকে যদি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় খাওয়ানো হয় তবে শিশুর ব্রেইন এই সিগন্যালকে ধারন করে এবং প্রতিদিন বাচ্চার নির্দিষ্ট সময়ে ক্ষুধা লাগে। বিভিন্ন স্টাডিতে দেখা গেছে যেসব বাচ্চাদের রুটিন নির্দিষ্ট নয় তাদের ক্ষুধার অনুভুতি নষ্ট হয়ে যায়।এতে বাচ্চার অরুচি হয় এবং বাচ্চা খেতে চায় না।

৩। ঘরেই তৈরি করুন নানান খাবারঃ
সুস্বাস্থ্যের জন্য এবং স্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যাস করানোর জন্য আপনার শিশুকে ঘরে তৈরি খাবার খেতে দিন। বাচ্চারা বাইরের খাবার খেতে চাইবেই। তাই চেষ্টা করুন সে বাইরে যা দেখে খেতে চায় সেটি ঘরে তৈরি করতে। সে যখন বাইরের খাবারগুলো ঘরেই খেতে পারবে তখন আর বাইরের খাবারের প্রতি আগ্রহ থাকবে না।

৪। আপনি-ই তার রোল মডেলঃ
আপনার সন্তানের কাছে আপনিই রোল মডেল তাই ঘরের বাইরে খাওয়াটা আপনাকেও বন্ধ করতে হবে। আপনি বাইরের খাবার খেলে সেও বাইরের খাবার খাওয়া শিখবে। অন্যদিকে আপনি যদি স্বাস্থ্যকর খাবার খান তাহলে আপনার বাচ্চারাও স্বাস্থ্যকর খাবার খাবে। আপনি যদি চান আপনার সন্তান কোন নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলুক তাহলে প্রথমে আপনাকে সেই নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে।

৫ । পরিবারের সবাই একসাথে আহার করুনঃ
শিশুকে অন্য ঘরে একা বা মোবাইল দেখে খেতে না দিয়ে পরিবারের সবার সাথে একসাথে খেতে দিন। খাবার ঘরে টেবিলে বসে খেতে দিন। এতে শিশু অন্যদের খওয়া দেখে বড়দের খাবার খেতে উৎসাহী হবে।

৬। ঘরে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে তুলুনঃ
ফ্রিজ ভর্তি চকলেট, কোক রাখবেন না। বাইরে থেকে আসার সময় বাচ্চার জন্য বাইরে থেকে খাবার কিনে আনবেন না। বাড়িতে স্বাস্থ্যকর খাবার রাখুন এতে শিশু স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। আপনি খাবার কিনতে যাওয়ার সময় আপনার বাচ্চাকেও সঙ্গে নিতে পারেন এবং তাকে নিয়ে ফল ও সবজি কিনুন চিপস, চকলেট বা প্যাকেটজাত খাবার কেনার বদলে।

৭ । বাইরে খেলে বেছে নিন স্বাস্থ্যকর খাবারঃ
পরিবারের সবাই মিলে বাহিরে খেতে গেলে স্বাস্থ্যকর খাবারটি বেছে নিন। শিশু যদি ভিন্ন কিছু খেতে চায় তাহলে শেফকে বলুন তেল বা পনির কম দিয়ে সবজি বেশি দিয়ে তৈরি করে দিতে। শিশুকে সালাদ খেতে উদ্বুদ্ধ করুন সাথে আপনিও খান। এতে সে আগ্রহী হয়ে উঠবে।

৫। টিফিনে স্বাস্থ্যকর খাবারঃ
স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু টিফিনের পরিকল্পনা করে রাখুন সপ্তাহের প্রথমেই। আমাদের দেশে দেখা যায় টিফিনে বেশিভাগ সময় যেকন এক আইটেমের খাবার দেয়া হয় যেমনঃ শুধু ন্যুডলস বা বিস্কুট বা বিরিয়ানি । কিন্তু দরকার হল বিভিন্ন আইটেমের খাবার মিক্স করে দেয়া। যেমনঃ ন্যুডলস/বিরিয়ানি এর সাথে সবজি + একটা যেকোন মৌসুমি ফল + বাদাম। সব সময় একই খাবার না দিয়ে একেক দিন একেক ধরণের খাবার ঘরে তৈরি করে দিন। এতে বাচ্চার টিফিন খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতিও আগ্রহ জন্মাবে।
তবে আজ থেকেই শুরু হোক তার স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস। কিছু কৌশলই বদলে দিতে পারে তার খাদ্যাভাস।

facebook.com linkedin.com twitter.com
Categories:

Leave a Reply

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে প্রয়োজন যে ৮টি খাবার
প্রতিটি পরিবারে বাচ্চাদের খাবার নিয়ে থাকে বাড়তি সচেতনতা। বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে, বাচ্চার বয়স
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে কোন ৫টি সমস্যা দেখা দেয়?
শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি হলে যে ৫টি সমস্যা দেখা দেয় বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, আয়োডিনের ঘাটতির
পরীক্ষার সময় মনোযোগ ধরে রাখতে ও সুস্থ থাকতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার
স্টুডেন্ট লাইফ মানেই প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা। শিক্ষা জীবনে স্টুডেন্টদের পরীক্ষার মাধ্যমেই ধাপে ধাপে এগিয়ে
দৈহিক সুস্থতায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জিংক কেন প্রয়োজন?
সুস্থ থাকতে হলে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ থাকা চাই। সহজভাবে বলতে চাইলে,
don't worry about summer
প্রচন্ড গরমে নিমিষেই দূর হবে সারাদিনের ক্লান্তি
রোদের তাপ ক্রমশ বাড়ছে তাই না? এদিকে এই গরমের দিনে মিসেস শারমিনকে থাকতে হয় সারাদিন
গরমে সুস্থ থাকতে কেমন খাবার খাওয়া চাই?
ইদানীং অনেক গরম পড়েছে তাই না? চারিদিকে গরমের দাবদাহে জীবন প্রায় অতিষ্ঠ। কিন্তু জীবন-জীবীকার খোঁজে আমাদের
কম খরচে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে খাদ্যতালিকা যেমন হওয়া উচিত
বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন? মাছ-মাংসের দাম শুনলেই মনে হয় বাজারে আগুন লেগে আছে। কিন্তু
DHA এবং ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট
ডোকোসাহেক্সনিক এসিড বা সংক্ষেপে DHA হলো মস্তিষ্ক গঠনের একদম প্রাথমিক উপাদান। সহজ করে বললে DHA
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন কেন জরুরি ?
গর্ভকালীন সময়ে গর্ভস্থ সন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশ নিশ্চিতে মায়ের চাই বাড়তি যত্ন ও সব রকমের পুষ্টি
বুদ্ধিতে বৃদ্ধিতে সন্তানের চাই সঠিক পুষ্টি
পুষ্টি ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বাড়ন্ত শিশুর জন্য খুব জরুরি। কেননা জন্মের পর প্রথ এই কয়েক