আমাদের সন্তানের প্রতিদিনের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। কারণ, আয়রন আমাদের সন্তানের বেড়ে উঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের অক্সিজেন সরবারহকারী লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করার মাধ্যমে হেলদি ব্লাড নিশ্চিত করে। পাশাপশি, সুস্থ মস্তিষ্ক ও জীবাণু ধ্বংসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে করে।
বয়সানুযায়ী আমাদের সন্তানদের গড়ে নিম্নোল্লিখিত পরিমাণে আয়রন গ্রহণ করা উচিত:
৭-১২ মাস – প্রতিদিন ১১ মি.গ্রা.১-৩ বছর – প্রতিদিন ৭ মি.গ্রা.৪-৮ বছর – প্রতিদিন ১০ মি.গ্রা.৯-১৩ বছর – প্রতিদিন ৮ মি.গ্রা.তদোর্ধ্ব কিশোর – প্রতিদিন ১১ মি.গ্রা. এবং কিশোরী – প্রতিদিন ১৫ মি.গ্রা. আয়রন প্রয়োজন।
যদি আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে এই রিকোয়ারমেন্ট পূরণ না হয় তবে সে আয়রনজনিত রোগ এনেমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে যার ফলে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হয় না। এ রোগে চামড়া ফ্যাকাসে, মেজাজ খিটখটে এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি, তার হার্টবিট বেশি থাকবে ও স্বাভবিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটবে।
এধরণের সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে ও তার স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করতে বাচ্চার পর্যাপ্ত আয়রন পাচ্ছে কিনা সেটা নিশ্চিত করতে হবে। নিচে বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন কিছু উচ্চ আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:
রেড মিট ডাল শাক কুমড়োর বীজ বাদাম
রেড মিটে, অর্থাৎ লিভার, কিডনি, ব্রেইন ও হার্টে অনেক বেশি পরিমাণে আয়রন থাকে। তবে এদের মাঝে লিভার সবচেয়ে বেশি আয়রন সমৃদ্ধ। এর ১০০ গ্রামে থাকে গড়ে ৬.৫ গ্রাম আয়রন। এছাড়াও রেড মিটে আয়রন ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, কপার, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন এ থাকে।
বিভিন্ন ধরণের ডাল যেমন মটরশুঁটি, ছোলা, মটর ও সয়াবিনে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। পাশাপাশি এতে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম সহ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান থাকে। ১৯৮ গ্রাম রান্না করা মটরশুঁটিতে ৬.৬ গ্রাম আয়রন থাকে।
আয়রনের আরেকটি অন্যতম শক্তিশালী উৎস হল শাক। ১০০ গ্রাম শাকে ২.৭ গ্রাম আয়রন থাকে। এতে ভিটামিন সি’ও অনেক বেশি পরিমাণে থাকে, যা শিশুর শরীরে আয়রন গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া শাকে আরও থাকে ক্যারোটিনয়েডস নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা আপনার সন্তানের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, সাথে চোখকেও বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
কুমড়োর বীজ আপনার সন্তানের জন্য হতে পারে উচ্চ আয়রন সমৃদ্ধ পোর্টেবল স্ন্যাক্স, যার ২৮ গ্রামে থাকে ২.৫ গ্রাম আয়রন।
বাদামে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। গড়ে ১০০ গ্রাম কাজুবাদামে থাকে ৬.৭ গ্রাম আয়রন। একই পরিমাণ পেস্তাবাদামে থাকে ৩.৯ গ্রাম আয়রন। এই দু’ধরণের বাদাম বাংলাদেশের সবজায়গায় পাওয়া যায়। যদিও হ্যাজেলনাট বাংলাদেশের সবজায়গায় পাওয়া যায় না, তবে পাওয়া গেলে এটি হতে পারে আয়রনের অন্যতম উৎস। কেননা, এর ১০০ গ্রামে থাকে গড়ে ৪.৭ গ্রাম আয়রন।
আসুন, আয়রনের শক্তিতে সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখি আমাদের সন্তানদেরকে।